কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন এলাকায় মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, হেরোইন এবং নগদ টাকাসহ এক মামা ও ভাগনীকে আটক করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন—নিউটাউন এলাকার মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া এবং সিজন মিয়ার স্ত্রী হাসি আক্তার মীম। তারা সম্পর্কে মামা ও ভাগনী।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সুত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শবনম শারমিনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, র্যাব-১৪ এর সদস্য এবং ভৈরব থানা পুলিশ অংশ নেয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে হাসি আক্তারের বসত ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ১৭১ পিস ইয়াবা, ১৭টি হেরোইনের পুড়িয়া এবং মাদক বিক্রির নগদ ৬৩ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের সময় আটক হওয়া সোহেল মিয়া ও হাসি আক্তার মীমকে ঘটনাস্থলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তারা জব্দকৃত মাদকের মালিকানা স্বীকার করেন। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট শবনম শারমিন উভয়কে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন। অনাদায়ে আরও এক মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ডের আদেশও দেওয়া হয়।
অভিযানে অংশ নেওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান, সহকারী পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম তালুকদার, র্যাবের ডিএডি রাম কৃষ্ণ সাহা এবং পুলিশের সদস্যরা জানান, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এলাকায় তারা একটি মাদক চক্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের মাধ্যমে পুরো চক্রকে শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।
এই অভিযানে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিষয়টিকে প্রশাসনের একটি সাহসী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয়রা বলছেন, নিউটাউন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই কিছু নির্দিষ্ট বাড়িকে ঘিরে মাদকের গোপন কার্যক্রম চলছিল। প্রশাসনের এই পদক্ষেপে তারা স্বস্তি পেয়েছেন এবং আশা করছেন নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকলে এলাকাটি আবারও মাদকমুক্ত হয়ে উঠবে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে এবং এই অভিযানের মাধ্যমে সেটির বাস্তব প্রমাণ মিলেছে। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতেও এমন অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, “মাদক শুধু ব্যক্তি নয়, একটি সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। তাই স্থানীয় জনগণের সচেতনতা ও সহায়তা ছাড়া একে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আমরা চাই সবাই তথ্য দিয়ে প্রশাসনের পাশে দাঁড়াক।”
অভিযান শেষে জব্দ করা মাদকদ্রব্য ও অর্থ সংশ্লিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আটক ব্যক্তিদের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আলাদাভাবে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
ঘটনার পরপরই বিভিন্ন সামাজিক ও সাংবাদিক মহল প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এতদিন প্রশাসন চোখ বন্ধ করে ছিল, আবার অনেকে বলছেন, এখন থেকে কঠোর অভিযান হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে এক বিষয়ে সবার মত এক—মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এই দৃঢ় অবস্থানকে ধরে রাখতে হবে।
Post a Comment