কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার বড়খারচর মহল্লায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। নিখোঁজের একদিন পর আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে নিজ এলাকা থেকে এক বাঁশ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম মো. জাহাঙ্গীর (৪০)। স্থানীয়দের মাঝে পরিচিত এই ব্যক্তিকে তার বাড়ির পেছনের একটি ঘাসে ঢাকা পতিত জমি থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহত জাহাঙ্গীর কুলিয়ারচর পৌরসভার বড়খারচর এলাকার দুখু মিয়ার ছেলে। পেশায় তিনি একজন বাঁশ ব্যবসায়ী ছিলেন এবং পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন জাহাঙ্গীর। পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। গভীর রাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজ দুপুরে পরিবারের পক্ষ থেকে কুলিয়ারচর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
পরে বিকেলে এলাকার কিছু ছেলে ফুটবল খেলার সময় একটি বল ঘাসের মধ্যে পড়ে যায়। বল খুঁজতে গিয়ে তারা দেখতে পায় একটি মরদেহ পড়ে আছে। এরপর তারা স্থানীয়দের ডেকে এনে পুলিশে খবর দিলে কুলিয়ারচর থানা-পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন কিশোর রবি জানায়, “আমরা বিকেলে বাড়ির পেছনে ফুটবল খেলছিলাম। হঠাৎ বল ঘাসের মধ্যে গেলে আমি খুঁজতে যাই। তখনই দেখি, একজন মানুষের দেহ পড়ে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের ডাকি, পরে সবাই মিলে পুলিশে খবর দেই।”
নিহতের বাবা দুখু মিয়া বলেন, “আমার ছেলে বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। আমরা অনেক খোঁজ করেছি। কারও সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা ছিল না। সে খুব ভালো স্বভাবের ছেলে ছিল। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই।”
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, মরদেহের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পরিবার এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর খুবই মিশুক ও শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। এমন নির্মমভাবে তার প্রাণহানি মেনে নেওয়া কঠিন।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো যে, গ্রামীণ জনপদগুলোতেও নিরাপত্তাহীনতা কতটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন এলাকাবাসীর একমাত্র দাবি, অপরাধীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।#কুলিয়ারচরহত্যা #কিশোরগঞ্জনিউজ #জাহাঙ্গীর #বাংলাদেশ #বাঁশব্যবসায়ী #গ্রামীননিরাপত্তা #বাংলাদেশসাংবাদিকতা
Post a Comment