কিশোরগঞ্জ, ৪ জুলাই ২০২৫:
নিয়োগপ্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত লঙ্ঘন করে কিশোরগঞ্জের এক ছাত্রলীগ কর্মী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন—এমন অভিযোগ ঘিরে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নাঈম হাছান, যিনি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কিষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতা আব্দুল মোতালিব স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
📝 কী ঘটেছে?
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকুন্দিয়া উপজেলার খামা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুন্নাহার সাথীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন নাঈম হাছান। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম নিজেও, যিনি দেনমোহরের সাক্ষী হিসেবেও স্বাক্ষর করেন।
তবে বিপত্তি ঘটে তখন, যখন অক্টোবর ২০২৪-এ প্রকাশিত পুলিশ এসআই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে 'অবিবাহিত' থাকার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও নাঈম হাছান নিজের বৈবাহিক অবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেন।
📜 ভুয়া সনদে নিয়োগ!
অভিযোগে বলা হয়েছে, নাঈম হাছান অবিবাহিত থাকার ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলামের কাছ থেকে। অথচ ওই চেয়ারম্যান নিজেই ছিলেন বিয়ের সাক্ষী। এই সনদ জমা দিয়ে ২০২৫ সালের এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি রোল নম্বর ১০৯৭২৩ হিসেবে ৪৬০ তম স্থান অর্জন করে চূড়ান্ত তালিকায় নাম লেখান।
👨⚖️ অভিযোগ ও তদন্ত
চৌগাংগা ইউনিয়নের বিড়ারভিটা গ্রামের আব্দুর রব গত ৩০ জুন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের সঙ্গে কাবিননামার কপি, বিয়ের প্রমাণ ও সাক্ষ্য যুক্ত করে তিনি দাবি করেন—এটি একটি পরিকল্পিত প্রতারণা ও জালিয়াতি।
তদন্তে উঠে আসে, ইটনা থানার ওসি জাফর ইকবাল পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় এ তথ্য জেনেও এড়িয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি গণমাধ্যমকে জানান, “তথ্য গোপনের কোনো ইচ্ছা ছিল না, বরং কেউ বিষয়টি জানায়নি।”
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলামও দায় এড়াতে বলেন, “সাক্ষী ছিলাম কি না মনে নেই। নাঈম সনদে স্বাক্ষরের অনুরোধ করলে দিয়ে দেই। তবে এখন নতুন করে বিবাহিত হিসেবে সনদ দিয়েছি।”
🕵️♂️ পুলিশ সদর দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন যাচ্ছে
এ নিয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার গণমাধ্যমকে জানান, “বাজিতপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়েছে এবং প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
📌 প্রাসঙ্গিক নিয়মনীতি
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের এসআই পদে নিয়োগের নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং শিক্ষানবিশকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবিবাহিত থাকতে হবে। তালাকপ্রাপ্ত বা তালাকপ্রাপ্তা প্রার্থীরাও গ্রহণযোগ্য নন।#নিয়োগ_জালিয়াতি #পুলিশ_ভেরিফিকেশন #কিশোরগঞ্জ_সংবাদ #এসআই_নিয়োগ #ছাত্রলীগ #বিবাহিত_গোপন
Post a Comment