ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন চুক্তি বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার (১৯ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “দেশের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী দলগুলোর টানা প্রতিবাদ ও উদ্বেগ সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনে চুক্তি করেছে—যা জনগণের মতামতের ঘোরতর অবমাননা। অবিলম্বে এ চুক্তি বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।”
তারা অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে কাজ করলেও বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ যুদ্ধপীড়িত দেশ না হওয়া সত্ত্বেও এমন অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত রহস্যজনক ও দেশের জন্য অসম্মানজনক বলে মন্তব্য করেন হেফাজত নেতারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জুলাই বিপ্লবের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে এই ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন হতো না। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সময় নষ্ট না করে এসব দাবি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া।”
হেফাজতের নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অতীতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা মুসলিম পারিবারিক আইন, ইসলামী শরিয়াহ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের দর্শনে অন্তর্ভুক্ত এলজিবিটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সম্প্রতি বিভিন্ন অপতৎপরতা বেড়েছে বলে তারা দাবি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “নারী অধিকার বা উন্নয়নের নামে এখন সমকামীদের কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
হেফাজত নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতিসংঘের অফিসকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সুযোগ বাড়তে পারে। “এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় ভিত্তির ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের পায়তারা,” বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
তারা আরও বলেন, “২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতের গণজমায়েতে পুলিশের হামলায় বহু আলেম-ওলামা নিহত হলেও জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এমনকি কথিত জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে ইসলামপন্থীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সময়ও তারা নীরব থেকেছে।”
বিবৃতির শেষ অংশে হেফাজত নেতারা বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস থাকার পরও ফিলিস্তিনে ৩০ বছর ধরে গণহত্যা বন্ধ হয়নি। সুতরাং বাংলাদেশকে নতুন কোনো যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না, ইনশাআল্লাহ।”
Post a Comment