কিশোরগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে ফয়জুল করীমের কড়া সমালোচনা: ‘আওয়ামী লীগ রাজতান্ত্রিক, বিএনপি চাঁদাবাজ’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, "আওয়ামী লীগ এদেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, আর বিএনপি পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজদের দলে। সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো টাকায় যারা চাঁদা তোলে—তারা জনগণের বন্ধু হতে পারে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকবে না।"

রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

'২০০১ সালে ভোট দিলেও বিএনপি বিশ্বাসভঙ্গ করেছে'

ফয়জুল করীম বলেন, "২০০১ সালে জনগণ বিএনপিকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিল। কিন্তু সেই দলই পরবর্তীতে দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় পাঁচবার। তারা জনগণের প্রত্যাশার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বিএনপির হাতে দেশ নিরাপদ নয়, যেমনটি আওয়ামী লীগের হাতেও নয়।"

তিনি আরও বলেন, "বিএনপি এমনকি সমাজের নিপীড়িত শ্রেণি—মুচি, ঋষি, টেম্পো চালকদের কাছ থেকেও চাঁদা তোলে। রাজনীতি কোনোভাবেই চাঁদাবাজির মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে না। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখি।"

'বারবার যারা ফেল করেছে, তাদের পরিবর্তে নতুন শক্তিকে সুযোগ দিন'

সমাবেশে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আপনারা জীবনে একাধিকবার নৌকা, লাঙল কিংবা ধানের শীষকে ভোট দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ব্যর্থ হয়েছে। এবার একবার হাতপাখাকে সুযোগ দিন। আমরা যদি ব্যর্থ হই, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের আর ডাকবেন না। কিন্তু সুযোগ না দিলে কিভাবে জানবেন আমরা কেমন?"

নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে নতুন নেতৃত্বের দাবি

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী যুব আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ রবিউল ইসলাম শাহীন।
সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—
🔹 জেলা যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমাদ সাকি,
🔹 ইসলামী আন্দোলন ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি শেখ ইহতেশাম বিল্লাহ আজিজ,
সহ জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, দেশের প্রধান দুটি দল গণতন্ত্রের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সময় এসেছে একটি আদর্শিক ও মূল্যবোধভিত্তিক নেতৃত্ব গঠনের। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

‘চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে হলে বিকল্প শক্তিকে শক্তিশালী করতে হবে’

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, দেশে যখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন জনগণের উচিত সুস্থ রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নেওয়া। বক্তারা দাবি করেন, "ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন একটি রাজনৈতিক শক্তি, যারা জনগণের কল্যাণে কাজ করতে চায়, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না।"

পরিশেষে: ইসলামপন্থীদের বিকল্প হিসেবে দেখা দেওয়ার চেষ্টা

ফয়জুল করীমের বক্তব্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। এ বক্তব্য শুধু রাজনীতিকদের জন্য নয়, দেশের সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নতুন রাজনৈতিক সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post