পাকুন্দিয়ায় পুকুরে ডুবে দেড় বছর বয়সী শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় পারিবারিক অসতর্কতার সুযোগে পুকুরের পানিতে পড়ে গিয়ে এক দেড় বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়িতে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শিশুটির নাম রাফসান। সে স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তাকিম ভূঁইয়ার ছেলে। রাফসান পরিবারের সবার কাছে আদরের সন্তান ছিল। ছোট্ট এই প্রাণের এমন করুণ মৃত্যুতে পরিবারসহ গোটা এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাফসান পরিবারের সবার অজান্তে বাড়ির পাশের পুকুরের দিকে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ তাকে না দেখে পরিবারের সদস্যরা চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে থাকা পুকুরে শিশুটির নিথর দেহ ভাসতে দেখা যায়। তড়িঘড়ি করে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে। শিশুটির মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কেউ কোনো অভিযোগ না করলেও নিয়ম অনুসারে থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান ওসি শাখাওয়াত হোসেন।

পরিবারের শোক ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া

শিশু রাফসানের বাবা মুস্তাকিম ভেঙে পড়েছেন ছেলের মৃত্যুতে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “একটুখানি চোখের আড়ালে গেলেই এমনটা হবে বুঝিনি। সব সময় ওকে চোখে চোখে রাখতাম। আজকে কেন যে ভুলটা করলাম...।” রাফসানের মা পুত্রশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশীরাও শোকাহত। শিশুটির প্রাণবন্ত হাসি ও খেলার মুহূর্তগুলো সবার মনে গেঁথে ছিল।

স্থানীয় মুরুব্বি আব্দুল মান্নান বলেন, “এই বয়সে কারো জীবন থেমে যাওয়া সবচেয়ে বেদনার। আমাদের এলাকাতেই এটি তৃতীয় শিশুমৃত্যু এই বছর। বিষয়টা উদ্বেগজনক।”

শিশু মৃত্যুর পেছনে যে কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর অসংখ্য শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়, বিশেষ করে বর্ষাকাল ও গ্রীষ্মকালে। গ্রামাঞ্চলে খোলা জলাধার, যেমন—পুকুর, ডোবা, খাল—শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। বাবা-মায়ের নজরদারির ঘাটতি কিংবা সচেতনতার অভাবে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়—এমন তথ্য রয়েছে ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ গবেষণায়। গবেষণায় বলা হয়, শিশুরা সাধারণত পরিবারের সবার অজান্তে খেলার ছলে পুকুর বা জলাশয়ের ধারে চলে যায় এবং সাঁতার না জানার কারণে ডুবে যায়।

কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব

শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পুকুরে বেড়া দেওয়া, শিশুদের জন্য খেলাধুলার নিরাপদ স্থান নিশ্চিত করা, এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা এবং স্কুল-পর্যায়ে পানিতে নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে।

প্রশাসনের বার্তা

পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন শিশু রাফসানের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম সুলতানা বলেন, “শিশুটির মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আমরা স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করব।”

Post a Comment

Previous Post Next Post