রেলওয়ের কোটি টাকার গাছ নষ্ট হচ্ছে অবহেলায়, বিক্রির অনুমতি না থাকায় ব্যবহারের সুযোগ নেই


কিশোরগঞ্জের রেলপথের পাশে পড়ে থাকা কোটি টাকারও বেশি মূল্যের গাছ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি অনুমোদনের জটিলতায় এ গাছগুলো বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না, আবার স্থানীয়রাও তা ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে মূল্যবান এই সরকারি সম্পদ বৃষ্টিতে পচে ও রোদে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।জানা গেছে, তিন দশক আগে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন রেলপথের দুই ধারে আকাশি, মেহগনি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়। এরপর আর কোনো প্রকার রক্ষণাবেক্ষণ বা তদারকি হয়নি। ফলে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়া এ গাছগুলো নিয়মিত ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রেললাইনের ওপর ভেঙে পড়ছে। ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি থাকায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সেগুলো কেটে লাইনের পাশে ফেলে রাখছে, কিন্তু বিক্রির অনুমতি না থাকায় তা বছরের পর বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পচে যাচ্ছে।ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রেলপথের কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে নীলগঞ্জ পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, শতাধিক গাছ পড়ে আছে। কিছু গাছ এখনও তুলনামূলক ভালো, কিন্তু বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক গাছের কাঠ মাটিতে মিশে গেছে।স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের সময় গাছ লাইনের ওপর পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করে। তখনই রেলওয়ে কর্মীরা গাছ কেটে পাশে সরিয়ে রাখে। কিন্তু পরবর্তীতে আর কেউ এগুলোর খবর রাখে না। এতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়, অন্যদিকে মূল্যবান সরকারি সম্পদও ধ্বংস হয়।কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের চাঁনমারি রেলক্রসিং থেকে কলাপড়া রেলক্রসিং পর্যন্তও একই দৃশ্য দেখা গেছে। এখানে কয়েকশ’ গাছ পড়ে আছে, যেগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। স্থানীয়দের ভাষায়, এভাবে বছরের পর বছর গাছগুলো নষ্ট হওয়া শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, সরকারি সম্পদের চরম অপচয়।রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আনিছুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ে। এগুলো ট্রেন চলাচলের স্বার্থে কেটে রাখা হয়, কিন্তু সরকারের অনুমতি না থাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে এসব গাছ নিলামে বিক্রি করলে রাজস্ব আসবে, মানুষের কাঠের চাহিদা মিটবে, আর রেলপথের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। পরিবেশ সচেতন মহলেরও মত, এভাবে ফেলে রাখার বদলে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা উচিত।যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে কোটি টাকার সম্পদ এভাবে নষ্ট হতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তাই দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে গাছগুলোকে রক্ষা ও কাজে লাগানোর দাবি জোরালো হচ্ছে।

#কিশোরগঞ্জসংবাদ #kishoreganjsongbad #রেলওয়ে #কিশোরগঞ্জ #বাংলাদেশ #প্রতিবেদন

Post a Comment

Previous Post Next Post