ভৈরবে মোবাইল কোর্টের অভিযানে ১৫০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ, ২০ হাজার টাকা জরিমানা

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের অভিযানে ১৫০ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মজুদদারের বিরুদ্ধে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

রোববার (৬ জুলাই ২০২৫) এ অভিযান পরিচালিত হয় কালিকাপ্রসাদ এলাকায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভৈরব উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিদওয়ান আহমেদ রাফি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার কালিকাপ্রসাদ এলাকার মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ মজুতের খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১৫০ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশও দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

উল্লেখ্য, ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশে ৫৫ মাইক্রনের নিচে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬(ক) ধারায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। তবুও গোপনে অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ক্ষতিকর পলিথিন তৈরি এবং বাজারজাত করে আসছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের অভিযান আরও জোরালোভাবে পরিচালিত না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা জানান, পলিথিনের ব্যবহার বাংলাদেশের মাটির উর্বরতা এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। নিষিদ্ধ পলিথিন মাটিতে সহজে মিশে যায় না, যার ফলে পানি নিষ্কাশনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় এবং শহর ও গ্রামীণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে। এছাড়া নদ-নালায় পলিথিন জমে জলজ জীববৈচিত্র্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

মোবাইল কোর্টের এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, জনসচেতনতা এবং নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব। তাই স্থানীয় জনগণকেও এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে এবং নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে।

এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ভৈরবের বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি দোকানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে যাতে কোনোভাবেই নিষিদ্ধ পলিথিন বাজারে প্রবেশ করতে না পারে। প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্য ব্যবহার বাড়াতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।

উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সারা দেশে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছে। জনস্বার্থে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগকে স্থানীয় বাসিন্দারাও সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, পলিথিনের বদলে সহজে পচনশীল ব্যাগের ব্যবহারকে জনপ্রিয় করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদওয়ান আহমেদ রাফি বলেন, “নিষিদ্ধ পলিথিন মজুদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স আছে। ভৈরবসহ পুরো উপজেলায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।” তিনি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, “পরিবেশ রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিবেশ রক্ষায় এ অভিযান এক নতুন বার্তা দিচ্ছে যে, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না। পরিবেশবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তুলতে প্রশাসন ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

#ভৈরব #কিশোরগঞ্জসংবাদ #নিষিদ্ধপলিথিন #পরিবেশঅভিযান #মোবাইলকোর্ট #Kishoreganjsongbad

Post a Comment

Previous Post Next Post