ভৈরবে ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়েছে, থানার সামনে ভুক্তভোগীর পরিবারসহ এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

ভৈরব প্রতিনিধি || ২১ জুলাই ২০২৫
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ধর্ষণচেষ্টা মামলার এক আসামি পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ভৈরব থানার প্রধান ফটকে ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারসহ স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। তারা অভিযুক্ত বাবুল মিয়ার দ্রুত গ্রেপ্তার এবং পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার সঠিক তদন্ত দাবি করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব পৌরসভার কালিপুর মধ্যপাড়া পশ্চিম বন্দ এলাকার বাসিন্দা মৃত আতর মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (৩৫) গত ১৭ জুন সকালে তার স্ত্রীর ননদের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ভুক্তভোগী ওই সময় বাসায় একা ছিলেন। তার স্বামী সুমন মিয়া একটি মামলায় জেলে এবং ছেলে স্কুলে থাকায় সুযোগে বাবুল ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। চিৎকার শুনে শাশুড়ি ও স্থানীয়রা এসে তাকে রক্ষা করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি তখন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরিবারের দাবি, ঘটনার দিন থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি। পরে ১৯ জুন ভুক্তভোগী কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ভৈরব থানা মামলাটি রুজু করে।

গ্রেপ্তার হলেও রাতের আঁধারে মুক্তি!

২০ জুলাই রাতে পুলিশ অভিযুক্ত বাবুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, তিনিও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন এবং তার সামনেই বাবুলকে হাতকড়া পরিয়ে ধরে থানায় নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু পরে পুলিশ দাবি করে, বাবুল নাকি থানায় আনার পথে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়। যদিও পরিবার এ বক্তব্যকে পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।

বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক ও নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ

ভুক্তভোগীর শাশুড়ি নাজমা বেগম বলেন, বাবুল দীর্ঘদিন ধরে তাদের এলাকায় মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি রাতে মেয়েদেরও নিয়ে আসে তার ফাঁকা ঘরে। তার অভিযোগ, বাবুল মিথ্যা মামলা দিয়ে তার ছেলেকে জেলে পাঠিয়ে ছেলের স্ত্রীর ওপর চরম নির্যাতনের সুযোগ খুঁজছিল।

থানা ও পুলিশের বক্তব্য

ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাকিব বিন ইসলাম দাবি করেন, “আমরা বাবুলকে গ্রেপ্তার করে হ্যান্ডকাফ পরাই। কিন্তু সে বাথরুমে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যায়।”
থানার ওসি খন্দকার ফোয়াদ রুহানি জানান, “আদালতের নির্দেশে মামলা রুজু করে এসআই রাকিবকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে তাকে মামলার তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাদিরুজ্জামান মামলাটি দেখবেন। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Post a Comment

Previous Post Next Post