কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা পারভিন বেগম (২৬) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর নবজাতকের গালে কাটার চিহ্ন দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে তদন্ত দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনাটি ঘটে ভৈরব শহরের ‘ডা. ইসরাত জাহান স্পেশালাইজড হাসপাতাল’-এ। সোমবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় পারভিন বেগম হাসপাতালে ভর্তি হন। গভীর রাতে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত বলে জানায় এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে একটি কার্টনে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়।
পারভিন বেগমের স্বামী আল আমিন, যিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী, জানান—মঙ্গলবার সকালে নবজাতকের মরদেহ কার্টন থেকে বের করার পর তাঁর গালের বাঁ পাশে একটি কাটার দাগ দেখতে পান। বিষয়টি দেখার পরই সন্দেহ জাগে তাঁদের মনে, সন্তান হয়তো অস্ত্রোপচারের সময়ই গাফিলতির শিকার হয়ে মারা গেছে। তিনি আরও বলেন, “গালের কাটা দাগটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করেছে। যদি দাগটা অস্ত্রোপচারের সময় হয়, তবে এটি একটি গুরুতর অবহেলা।”
ঘটনার পর আল আমিন নবজাতকের মরদেহ নিয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান এবং লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি গ্রহণ করেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম। তবে এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
হাসপাতালের দাবি, শিশুটি জন্মের আগেই মৃত ছিল। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. ইসরাত জাহান অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। তবে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেসথেসিয়া দেন তাঁর স্বামী এবং হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. ফরহাদ আহমেদ।
ডা. ফরহাদ জানান, “রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল। জরায়ু ফেটে যাওয়ার কারণে সন্তান বাঁচানো সম্ভব ছিল না। অস্ত্রোপচারের আগে আমরা পরিবারকে ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করেছি। অস্ত্রোপচারের পর মৃত নবজাতক দেখানো হয় এবং হস্তান্তরের সময় গালে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।”
তবে পরিবারের দাবি, মৃত শিশুটিকে কার্টনে রেখে দেওয়ার ফলে তাঁরা চিহ্নটি তাৎক্ষণিকভাবে খেয়াল করতে পারেননি।
সরকারি তদন্তের নির্দেশনা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবদুল করিম বলেন, “আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। নবজাতকের বাঁ গালে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দেখা গেছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার তদন্তের দাবি উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যেও। তাদের ভাষ্য, এ ধরনের ঘটনার যথাযথ তদন্ত না হলে ভবিষ্যতে আরও অনেক পরিবার একই রকম দুর্ভোগে পড়তে পারে। একই সঙ্গে অনেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন।
স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনার ছাপ
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে। প্রায়ই দেখা যায় বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী বা নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ উঠছে, কিন্তু তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাবে সেসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।#ভৈরব #নবজাতকমৃত্যু #চিকিৎসায়গাফিলতি #বাংলাদেশস্বাস্থ্যব্যবস্থা #অন্তঃসত্ত্বা #স্বাস্থ্যখাত #ভৈরবহাসপাতাল
Post a Comment