ভৈরব প্রতিনিধি: জয়নাল আবেদীন রিটন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় এক যুবলীগ নেতার দাপটে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলছে পুলিশ পাহারায়। শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা আজিম রানা ভূঁইয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখলদারির চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২৯ জুন বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পূর্বকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগে বলা হয়, ঐদিন দুপুরে প্রধান শিক্ষক এ কে এম মাসুদকে বিদ্যালয়ের নিজ অফিসকক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন আজিম রানা। শিক্ষকরা দৌড়ে এসে প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করেন এবং দরজা বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আজিম রানা ভূঁইয়া গজারিয়া ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ে যেতেন। এমনকি বিদ্যালয়ের পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও নিজের কাজে ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাদক সেবন করতেন এবং বাধা দিলে হুমকি দিতেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রধান শিক্ষক মাসুদ জানান, “তার প্রভাব এতটাই ছিল যে কোনো কিছু বললে সে মারতে আসতো। মাদকের বিষয়ে বাধা দিলে সে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতো। তার অত্যাচারে আমরা সবাই আতঙ্কিত। আমি প্রশাসনের কাছে দ্রুত এবং কঠোর বিচার চাই।”
ঘটনার দিন সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, যথারীতি ক্লাস চলছে, তবে চারপাশে অস্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভেতরে-পেছনে বসে আছে পুলিশ সদস্যরা। বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশের দুটি গাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত আজিম রানা একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তার ভাই মাসুদ ভূঁইয়াকে সম্প্রতি ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের পরিবারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।
শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলা পর্যায়ের দুইটি শিক্ষক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জেলার ৬০০ শিক্ষকের অংশগ্রহণে কঠোর আন্দোলনে নামা হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি গোলাম রব্বানী বলেন, “প্রধান শিক্ষককে এভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, ভয়ংকরও। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আন্দোলন ছাড়া উপায় থাকবে না।”
ভৈরব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, “ঘটনার পর থানায় তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ভৈরব সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষককে উদ্ধার করি এবং ঘটনার সত্যতা পাই। অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চলছে এবং স্কুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আজিম রানা পলাতক রয়েছেন। পুলিশের একাধিক অভিযানেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষক মহলে যেমন অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন ঘটনা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।#ভৈরব #শিক্ষক_নির্যাতন #যুবলীগ #বিদ্যালয়ে_পুলিশ #আজিম_রানা #শিক্ষাব্যবস্থা #বাংলাদেশ_শিক্ষা #BreakingNewsBD #TeacherRights
Post a Comment