ভৈরবে অর্থের জোগান দিতে কোরবানির মাংস বিক্রি

ভৈরব সংবাদদাতা:
ঈদুল আযহার মূল বার্তা কোরবানির পাশাপাশি সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই উপলক্ষ্যে সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি দিয়ে তার মাংস বিতরণ করেন গরীব ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে। কিন্তু ভৈরব শহরের বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। ঈদের এই আনন্দঘন সময়ে হতদরিদ্র, দিনমজুর, ভবঘুরে এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের অনেকেই কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেও তা রাঁধতে না পেরে বা সংরক্ষণ করতে না পারায় বিক্রি করে দিচ্ছেন নগদ অর্থের জন্য।

‍অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও রান্নার সামগ্রীর অভাব

অনেকেই যারা ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করেন, তাদের ঘরে না আছে ফ্রিজ, না আছে তেল-মসলা। ফলে এই মাংস তারা রান্না করতে অক্ষম হন। কেউ কেউ আবার রাস্তায় বা যেখানে রাত হয় সেখানে থাকেন। যেমন রসিদ মিয়া বলেন, “আমার তো কোন ঘরবাড়ি নেই। মাংস রান্না করারও সুযোগ নেই। তাই বিক্রি করে দিচ্ছি। এতে কিছু টাকাও আয় হয়, কয়েকদিন ভালো খাবার খেতে পারি।”

‍মাংসের হাট: অলিগলিতে বসছে ব্যতিক্রমী বেচাকেনা

ভৈরবের বঙ্গবন্ধু সরণি, মনমরা ব্রিজ, বাসস্ট্যান্ড, দুর্জয় মোড় ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিকেল হতেই বসে যায় এক ব্যতিক্রমী হাট। এখানে কোরবানির মাংস বিক্রি করছেন হতদরিদ্ররা, যাদের কেউ কেউ এসেছেন পাশের উপজেলা বা জেলা থেকে। তাদের মধ্যে আছেন ভিক্ষুক, নারী শ্রমিক, দিনমজুর ও ভবঘুরেরা।
প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। তবে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের কারণে দামের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে গরীব বিক্রেতাদের হাতছাড়া হয়ে। ফলে অনেক নিম্নবিত্ত ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, আগের চেয়ে এবার মাংসের দাম বেশি।

‍ঈদের দিনে পেট ভরে খাবার নয়, পেটে ভাত জোগাড়ই বড় বিষয়

আক্কাছ মিয়া ও তার স্ত্রী, যাঁরা প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকের কাজ করেন, মাংস পেয়েছেন প্রায় ৮ কেজি। কিন্তু রান্নার উপকরণ না থাকায় সেটাও তাদের কাছে অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিক্রি করে দিয়েছেন। “মাংস দিয়ে কি করব? তেল-মসলা তো ঘরে নেই,” বলেন আক্কাছ।

‍ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি: বিক্রি করলে গুনাহ হবে না

এই প্রসঙ্গে স্থানীয় মুফতি শফিকুল ইসলাম বলেন, “যদি কেউ তাদের প্রাপ্ত কোরবানির মাংস থেকে প্রয়োজনীয় অংশ রেখে অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করে, তাতে কোনো গুনাহ নেই। বরং তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন মেটানো উত্তম।”

‍কোরবানির মাংসের কেনাবেচায় উঠে আসছে নতুন বাস্তবতা

এই হাটগুলোতে ক্রেতারা সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা মানুষ। যাদের নিজেরা কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কিংবা কারো বাড়ি থেকে মাংস চেয়ে আনার সাহসও করেন না। তারা অপেক্ষায় থাকেন, কখন মাংসের হাটে কিছুটা কম দামে মাংস পাওয়া যাবে। এভাবে চলে এক প্রকার অঘোষিত বিকল্প বাজার ব্যবস্থা।

‍মানবিকতা বনাম বাস্তবতা

এই ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে সমাজের বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতা। ঈদের আনন্দ যাদের জন্য সীমিত, তাদের জন্য কোরবানির মাংস কেবল খাবারের উৎস নয়, অর্থ উপার্জনের সুযোগও। একদিকে মাংস বিক্রি করে তারা চাহিদা পূরণ করছেন, অন্যদিকে সমাজের মধ্যবিত্তরা স্বল্প দামে মাংস কিনে সুবিধা নিচ্ছেন।#ভৈরব #কোরবানি #মাংস_বিক্রি #দারিদ্র্য #ঈদুলআজহা #বাংলাদেশ #সামাজিকবৈষম্য #মানবিকতা #সংবাদ

Post a Comment

Previous Post Next Post