কুলিয়ারচরের কৃষকরা ধান ফেলে ঝুঁকছেন কচুর চাষে, বাড়ছে রপ্তানি সম্ভাবনাও

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে কৃষিজমিতে ধান বাদ দিয়ে কচু চাষে মনোনিবেশ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। লাভজনক ও টেকসই চাষাবাদ হওয়ায় এই অঞ্চলে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নারিকেলি ও সাদা জাতের কচু। ধানের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি লাভ পাওয়ায় কৃষকরা এখন কচুকেই দেখছেন ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে।

কচু যেমন পুষ্টিকর খাদ্য, তেমনি বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। কুলিয়ারচরের কৃষকরা নিজেদের পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে এখন কচু ও কচুর লতি রপ্তানি করছেন মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। ফলে এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

৫০ বছরের ঐতিহ্য, বাড়ছে আধুনিকায়ন

কুলিয়ারচরের গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে কচু চাষের ইতিহাস প্রায় অর্ধশতাব্দী পুরোনো। স্থানীয় কৃষকরা এই ফসল চাষে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন দীর্ঘদিনের চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে। এখন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সরকারি সহায়তা মিলিয়ে কচু চাষ হয়ে উঠেছে আরও সহজ এবং লাভজনক।

শুধু গোবরিয়া নয়, উপজেলার রামদী ও সালুয়া ইউনিয়নের কৃষকরাও এখন কচু চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলের পথে হাঁটছেন। নারিকেলি জাতের কচু, যার স্বাদ ও স্থায়িত্ব বেশি, তার প্রতি চাহিদা বেশি থাকায় এই জাতটিই বেশি চাষ হচ্ছে।

সরকারি সহায়তায় আবাদ বাড়ছে, প্রযুক্তির ব্যবহার

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে কুলিয়ারচরে প্রায় ৩১৫ হেক্টর জমিতে কচুর আবাদ হয়েছে, যেখানে ৫ বছর আগেও এই পরিমাণ ছিল ২৫০ হেক্টর। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে আবাদ বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ ও মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ।

কুলিয়ারচরের কৃষকরা জানান, একবার কচু তুলে নেওয়ার পর সেই জমিতেই রোপা আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয়, ফলে একই জমি থেকে বছরে দুইবার ফলন পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে, লাভ বাড়ে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, “এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আমরা চাষিদের টেকনিক্যাল সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। কচুর উৎপাদন বাড়ায় রপ্তানির সুযোগও তৈরি হচ্ছে।”

কৃষকের মুখে হাসি, গ্রামে ফিরছে আর্থিক স্বচ্ছলতা

স্থানীয় কৃষক আবু হানিফ জানালেন, “আগে ধান চাষ করে খরচ উঠত না। এখন একই জমিতে কচু চাষ করে যে পরিমাণ আয় হয়, তা দিয়ে পরিবার চালানো তো হয়ই, কিছু সঞ্চয়ও করতে পারছি।”

আরেক চাষি রহিম উদ্দিন বলেন, “এক বিঘা জমিতে কচু চাষে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু বিক্রি হয় ৮০-৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ধানের সঙ্গে এই আয় তুলনা করা যায় না।”

রপ্তানিতে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে কচু

কচু এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, রপ্তানির তালিকায়ও জায়গা করে নিচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের মাঝে কচু ও কচুর লতির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কচু চাষকে শিল্পভিত্তিক কৃষিতে রূপান্তর করলে ভবিষ্যতে তা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।#কিশোরগঞ্জ #কচুচাষ #কৃষিসফলতা #রপ্তানি #বাংলাদেশকৃষি

Post a Comment

Previous Post Next Post