রিপোর্টার: জয়নাল আবেদীন রিটন
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের বাসিন্দা আজিম রানা, যিনি এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২৯ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে মানিকদী পূর্বকান্দা এলাকায়, যেখানে অবস্থিত পূর্বকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, স্কুলের পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত মোটর স্কুল চলাকালীন সময়ে খুলে নিয়ে গিয়ে তা ব্যবহার করায় মোটরটি নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় কৈফিয়ত চাইতেই আজিম রানা উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করেন।
শিক্ষকের বক্তব্য
প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, “রোববার সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি পানির পাম্পটি বিকল হয়ে গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, স্থানীয় যুবলীগ নেতা আজিম রানা সেটি খুলে তার ব্যক্তিগত পুকুরে পানি সেচের কাজে ব্যবহার করেছেন। আমি বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং হঠাৎ করেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরে আমাকে ঘুষি মারেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি অফিস রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করি।”
তিনি আরও বলেন, “পরে সহকর্মীদের সহায়তায় থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করে। আমি চাই, হামলাকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
ভৈরব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “একজন শিক্ষক তার দায়িত্ব পালনকালে এ ধরনের হামলার ঘটনা দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক পরিচয়ধারী হলেও তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করবো।”
পুলিশের অবস্থান
ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ফরিদুজ্জামান জানান, “খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাই এবং প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করি। প্রাথমিক তদন্তে মারধরের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্ত আজিম রানাকে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হলেও তিনি পালিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা এ ঘটনাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা এবং শিক্ষক মর্যাদার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
একজন অভিভাবক বলেন, “স্কুলের মতো একটি স্থানে যেখানে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়, সেখানে একজন শিক্ষক নিরাপদ না থাকলে আমাদের সন্তানেরা কীভাবে নিরাপদ থাকবে?”
আইন ও নৈতিকতা প্রশ্নে বিতর্ক
ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ থাকায় বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযুক্ত যত প্রভাবশালীই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#ভৈরব #শিক্ষক_নির্যাতন #যুবলীগ #বাংলাদেশ #শিক্ষা_খাত #আইন_ও_বিচার
Post a Comment