ইটনায় বেপরোয়া অটোরিকশা চাপায় প্রাণ গেল শিশু আরিয়ানের

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় অটোরিকশার ধাক্কায় আরিয়ান মিয়া (৪) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে, যা এলাকাবাসীর মাঝে শোক ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

নিহত আরিয়ান মিয়া ইটনা সদর ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেনের একমাত্র ছেলে। তারা সরকারি দাসপাড়া আবাসনের পাশেই বসবাস করতেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী শোকাহত হলেও প্রশ্ন তুলেছেন চলাচলরত যানবাহনের বেপরোয়া গতির নিয়ন্ত্রণহীনতার বিষয়ে।

ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর ইকবাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরিয়ান তার বাবার সঙ্গে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। ঠিক তখনই দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি অটোরিকশা তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশাটি চালাচ্ছিলেন পাশের গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আজিজুল মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় গাড়িটির গতি ছিল অত্যন্ত বেশি। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং শিশু আরিয়ানকে চাপা দেন। ঘটনাস্থলেই শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং সে অচেতন হয়ে পড়ে।

পরিবারের লোকজন দ্রুত আরিয়ানকে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কাউছার আহমেদ শিশু আরিয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ মর্মান্তিক মৃত্যু এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইটনা ও আশপাশের এলাকায় অটোরিকশাচালকদের মধ্যে ট্রাফিক নিয়ম না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লাইসেন্সবিহীন চালক এবং অপ্রশিক্ষিত গাড়িচালকের কারণে এমন দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। বিশেষ করে আবাসিক এলাকার মধ্যে দিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো এখন যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিশুটির বাবা বাবুল হোসেন বলেন, “আমার চোখের সামনেই আমার ছেলেটা চলে গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। এমন দুর্ঘটনার বিচার চাই।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর চালক আজিজুল মিয়া ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ইটনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা আরও জোরদার করা দরকার। অটোরিকশা ও অন্যান্য ছোট যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, চালকের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স যাচাই না করা হলে এমন দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

শিশু আরিয়ানের অকাল মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই একটি দুঃখজনক বার্তা বহন করছে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সড়ক নিরাপত্তা কেবল আইন প্রয়োগ নয়, নাগরিক সচেতনতাও জরুরি।#ইটনা #সড়কদুর্ঘটনা #শিশুমৃত্যু #কিশোরগঞ্জ #দায়িত্বহীনচালক

Post a Comment

Previous Post Next Post