ভৈরব প্রতিনিধি: জয়নাল আবেদীন রিটন
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদে যৌথভাবে পরিচালিত এক অভিযানে নিষিদ্ধ চায়না দোয়ারী জাল জব্দ করে তা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে প্রায় ৭ হাজার মিটার দীর্ঘ জাল উদ্ধার করা হয়, যেগুলো অবৈধভাবে নদীতে স্থাপন করা হয়েছিল।
অভিযানটি পরিচালনা করেন ভৈরব উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক। তাকে সহযোগিতা করেন ভৈরব নৌ-থানার পুলিশ সদস্য ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুরু হওয়া এ অভিযানে নদীতে চষে বেড়ানো মোট ৫০টি চায়না দোয়ারী জাল জব্দ করা হয়।
ক্ষতিকর জালের ভয়াবহ প্রভাব
চায়না দোয়ারী জালকে মৎস্য উৎপাদনের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধরনের জাল পানিতে একবার স্থাপন করা হলে, এতে প্রবেশ করা মাছ সহজে বের হতে পারে না। এর ফলে ডিমওয়ালা মা মাছ এবং ছোট পোনা মাছ ধ্বংস হয়ে যায়, যা সামগ্রিকভাবে দেশের মৎস্যসম্পদ হ্রাসের জন্য দায়ী।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক বলেন, “নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ জালের কারণে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নদীতে টেকসই মৎস্য সম্পদ বজায় রাখা। সে লক্ষ্যে আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি এবং এই ধরণের ক্ষতিকর জাল ব্যবহারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”
জেলেরা পালিয়ে গেলেও অভিযান সফল
অভিযানের খবর পেয়ে অনেক জেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবহৃত জাল নদী থেকে জব্দ করতে সক্ষম হয়। অভিযান শেষে জব্দকৃত সব জাল নদীতীরেই আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চায়না দোয়ারী জাল এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, এতে মাছ একবার ঢুকলে তা আর বের হতে পারে না। এতে করে শুধু বড় মাছই নয়, প্রজননক্ষম মা মাছ ও নতুন প্রজন্মের পোনা মাছও ধ্বংস হয়ে যায়। ফলাফলস্বরূপ, মৎস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং দেশের জেলেরা পড়ছে বিপাকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ
ভৈরব উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, শুধু অভিযান চালিয়েই থেমে থাকছে না তারা। জেলেদের সচেতন করতে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ, সভা ও আলোচনার আয়োজন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জনগণকেও অনুরোধ করা হচ্ছে, কেউ যদি নদীতে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করতে দেখেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে জানাতে।
মৎস্য কর্মকর্তা জয় বনিক আরও বলেন, “মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা চাই জেলেরা বিকল্প ও বৈধ পদ্ধতিতে মাছ ধরুক এবং আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষিত থাকুক।”
#ভৈরব #নিষিদ্ধজাল #মৎস্যঅভিযান #বাংলাদেশনদী #চায়নাদোয়ারীজাল #পরিবেশরক্ষা #মৎস্যসম্পদ
Post a Comment