ভৈরব সংবাদদাতা: জয়নাল আবেদীন রিটন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার জগন্নাথপুর দক্ষিণ পাড়ায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে স্থানীয় দুই পক্ষের বিরোধ। রবিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত টানা দু’ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ আহত হন এবং কয়েকটি ঘরবাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরো ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২৭ জুন শুক্রবার, যখন এক ভাড়াটিয়া তুষার দুপুরের খাবার সরবরাহের জন্য ভ্যানে করে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে প্রতিবেশী সায়মন নামের এক যুবক ঠাট্টা করে খাবারের বাটি খুলে দেখার চেষ্টা করলে তুষার তাকে বাধা দেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে মারামারিতে রূপ নেয়। ওই সময় সায়মনের সঙ্গে তার বন্ধু আসিফও ছিলেন। রাতেই স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা আলোচনার মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করেন।
তবে ঘটনার এখানেই ইতি ঘটেনি। রবিবার সন্ধ্যায় একই বিষয়কে কেন্দ্র করে তুষার ও আসিফের মধ্যে আবারও বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষ—তুষার ও মন্নাফ মিয়ার সমর্থক দল এবং আসিফ ও ভূইয়া-ভাওয়াল পরিবারের সদস্যরা—পরস্পরের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দেশীয় অস্ত্র, দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা, এমনকি ইট-পাটকেল নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা।
ঘটনায় গুরুতর আহত হন হাছেনা বেগম (৫০), লিটন মিয়া (৬০) ও পাবেল মিয়া (২২)। তাদের মধ্যে হাছেনা বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও আহতদের মধ্যে রয়েছেন রানা মিয়া (২৬), দিপু মিয়া (১৬) এবং আরও পাঁচজন।
এলাকার বাসিন্দা আকাশ মিয়া বলেন, “যে বিষয়টা নিয়ে ঝগড়া, তা খুবই ছোট। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। বাড়িঘর ভাঙচুর, মানুষ আহত—সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি।”
স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা মো. ইকবাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “আমার মাকে আওয়ামী লীগের লোকজন, বিশেষ করে লিটন মিয়ার অনুসারীরা দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে। আমি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
অন্যদিকে আহত সুরাইয়া বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল লিটন, পাবেলসহ আরও কয়েকজন। আমি বাধা দিতে গেলে তারাও আমাকে কুপিয়ে আহত করে।”
ঘটনার পর ভৈরব থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর স্থানীয় ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসিবুল হক ভূইয়া বলেন, “খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং স্বাভাবিক রয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনাটি শুধু একটি এলাকা নয়, গোটা ভৈরব শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, উঠতি বয়সের যুবকদের দায়িত্বহীন আচরণ এবং মুরুব্বিদের কথায় কান না দেওয়া এই সহিংসতার অন্যতম কারণ।
স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামাজিক সচেতনতা এবং পারস্পরিক সহনশীলতার অভাবই এমন ছোট বিষয়কে বড় রূপ দেওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রাখে। প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।#ভৈরবসংঘর্ষ #আহত১০ #তুচ্ছঘটনা #জগন্নাথপুর #ভাঙচুর #খাবারেরবাটি #স্থানীয়রাজনীতি #ভৈরবপুলিশ #বাংলাদেশসংবাদ #সামাজিকসহিংসতা
Post a Comment