সরকারি বরাদ্দ না পেয়ে নিজেরাই চাঁদা তুলে রাস্তা সংস্কার করলেন পাকুন্দিয়ার যুবকরা
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা রাস্তা বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে রাস্তাটির অবস্থা এমন ভয়াবহ রূপ নেয় যে, স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়ে। অথচ এই রাস্তাটিই ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার শত শত শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রাস্তাটির উন্নয়ন ও সংস্কারের দাবি জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকার কিছু যুবক নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সংস্কারের কাজে নেমে পড়েছেন। নিজেদের অর্থে নয়, বরং এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে শুরু করেছেন ইট, সুরকি ও বালু দিয়ে সংস্কার কাজ।
নিজেদের উদ্যোগেই গড়ে তুলছেন চলাচলের পথ
ঘাগড়া গ্রামের তরুণ ইদ্রিস মিয়া বলেন, “আমরা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। বর্ষা এলে হাঁটাও কঠিন হয়ে যায়। ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যেতে কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। অনেক সময় পড়ে যায়, কাপড় নষ্ট হয়। বারবার বলেও কোনো ফল হয়নি। তাই আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেই কিছু একটা করতে হবে। এরপর এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে চাঁদা তুলি।”
চাঁদার টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে ইট, সুরকি ও বালু। স্থানীয় যুবকেরা মিলে রাস্তার গর্ত ও জলাবদ্ধ অংশে নিজ হাতে কাজ করছেন। তাদের মতে, এটি সাময়িক সমাধান হলেও অন্তত বর্ষায় কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।
নির্মাণে অংশ নিচ্ছেন সকলে, সাহায্য করছেন যার যা সামর্থ্য
স্থানীয়রা জানায়, কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা, আবার কেউ তার চেয়েও বেশি চাঁদা দিয়েছেন। কেউ কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেও সহযোগিতা করছেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে রাস্তাটি কিছুটা হলেও চলাচলের উপযোগী হচ্ছে।
এলাকার আরেক বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এই রাস্তায় চলতে আমাদের অভ্যস্ত হতে হয়েছে, কিন্তু শিশুরা কষ্ট পায় বেশি। তাই এলাকার যুবকদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের উচিত সবাই মিলে এ কাজ সফল করা।”
চেয়ারম্যান জানালেন সরকারি সহায়তার আশার কথা
চন্ডিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামছুদ্দিন বলেন, “ঘাগড়া গ্রামের এই রাস্তাটি কয়েক বছর আগে আংশিক ইট দিয়ে সলিং করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে গেছে। বিশেষ করে বর্ষায় রাস্তাটি গর্তে পরিণত হয়। আমি চেষ্টা করছি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সরকারি বরাদ্দ আনার। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।”
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও কেনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি—তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ
গ্রামবাসীরা বলেন, তারা বছরের পর বছর ভাঙা রাস্তায় চলেছেন। জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা কিংবা সাধারণ দৈনন্দিন চলাফেরার জন্য একটি চলাচলের উপযোগী রাস্তা থাকা প্রয়োজন। অথচ সেই প্রয়োজন মেটাতে কাউকেই দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নিজেরাই পথে নামতে হয়েছে।
উন্নয়নের গল্পে গ্রাম কোথায়?
প্রতিদিনই দেশের উন্নয়নের গল্প শোনা যায় টেলিভিশন, পত্রিকা আর প্রচারণায়। কিন্তু ঘাগড়া গ্রামের এই কাঁচা রাস্তা যেন সে গল্পে পড়ে নেই। এখানকার মানুষের উন্নয়ন মানে এখনও মেরামতের ইট সুরকিতে ঠাঁই, নিজেদের শ্রম আর একরাশ হতাশা।
তবুও এই উদ্যোগ বলে দেয়, সমাজে এখনও স্বেচ্ছাশ্রমের জায়গা আছে, দায়িত্বশীল যুবকদের অভাব নেই। তাদের এই কাজ প্রশাসনের চোখে পড়া জরুরি। প্রয়োজন সরকারি বরাদ্দ ও দ্রুত পদক্ষেপ।#ঘাগড়া_রাস্তাঘাট #পাকুন্দিয়া_খবর #চাঁদা_তুলে_সংস্কার #কিশোরগঞ্জ_গ্রাম #সরকারি_উদাসীনতা #বাংলাদেশ_উন্নয়ন
Post a Comment