পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে কটিয়াদীর গাছে গাছে ঝুলছে মাটির তৈরি হাঁড়ি। পাখিপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ‘কটিয়াদী রক্তদান সমিতি’ নামক একটি মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনটির প্রাণপুরুষ বদরুল আলম নাঈম, যিনি এলাকাবাসীর কাছে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত।
এই ব্যতিক্রমী প্রকল্পের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষত বর্ষা মৌসুমে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ার কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা। হাঁড়িগুলো গাছে ঝুলিয়ে এমনভাবে স্থাপন করা হচ্ছে, যেন সেগুলো প্রাকৃতিক বাসার মতোই নিরাপদ এবং আরামদায়ক হয়।
প্রতিবছর বর্ষা এলেই পাখিদের আবাস ধ্বংস হয়। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই মাটির হাঁড়িগুলো হয়ে উঠেছে পাখিদের অভয়াশ্রম। বাবুই, চড়ুই, টুনটুনি, ফিঙে, বুলবুলি ইত্যাদি ছোট পাখিরা সহজেই এসব হাঁড়িকে বাসা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। হাঁড়ির ছায়াঘেরা ও ঠাণ্ডা পরিবেশ এবং নিরাপত্তা—পাখিদের আকৃষ্ট করছে দ্রুতই।
❝ মানবতার ফেরিওয়ালার প্রকৃতিতে ভালোবাসা ❞
বদরুল আলম নাঈম নিজস্ব তহবিল থেকেই হাঁড়িগুলো সংগ্রহ ও স্থাপন করছেন। শুধু পাখিদের বাসা তৈরিই নয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজের নানা কল্যাণমূলক কাজে সক্রিয় রয়েছেন। রক্তদান কর্মসূচি, অসহায় মানুষের সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ, পাঠাগার স্থাপন, খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ ও রমজানে খাদ্য সহায়তা—সব কিছুতেই তাঁর অবদান চোখে পড়ার মতো।
তিনি বলেন,
"প্রতিটি প্রাণের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমরা যদি প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল না হই, তাহলে একদিন আমরাও বিপদে পড়ব। পাখিরা আমাদের প্রকৃতির এক অপরিহার্য অংশ—তাদের আশ্রয় নিশ্চিত করাও মানবতার কাজ।"
ছোট থেকে বড় সংগঠনের বিস্তার
অল্প কয়েকজন তরুণ নিয়ে শুরু হওয়া ‘কটিয়াদী রক্তদান সমিতি’ এখন হাজারো স্বেচ্ছাসেবকের প্রাণের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। শুধু কটিয়াদী নয়, এই সংগঠনের কার্যক্রম ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তেও। রক্তদান থেকে শুরু করে দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণ, এমনকি কর্মসংস্থানের জন্যও সহায়তা করছে সংগঠনটি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে যেমন পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের মাঝে তৈরি হচ্ছে পরিবেশসচেতনতা ও প্রাণপ্রেম। স্থানীয়দের মতে, এই ধরনের কাজ শুধু পাখিদেরই নয়, মানুষের মনকেও শান্ত করে।
পরিবেশ সংরক্ষণে ইতিবাচক উদাহরণ
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই উদ্যোগ কেবল একটি স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচি নয়, বরং এটি একটি পরিবেশগত আন্দোলনের সূচনা। পাখিদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, কারণ আমরা তাদের জন্য আবাস রাখছি না। এই মাটির হাঁড়ি ব্যবস্থাপনা যদি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে পাখির সংখ্যা বাড়বে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।#পাখিরঅভয়ারণ্য #কটিয়াদীসংবাদ #পরিবেশবান্ধব #মানবিকউদ্যোগ #কিশোরগঞ্জ
Post a Comment