কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ এস এম জহির রায়হান একই প্রতিষ্ঠানের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক দ্বীন ইসলামকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সোমবার দুপুরে মানববন্ধনে অংশ নেন।
সোমবার (২৩ জুন) বেলা ১২টার দিকে স্কুলের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। উপস্থিত বক্তারা প্রধান শিক্ষক জহির রায়হানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বক্তব্যে উঠে আসে, গত রবিবার বেতন ও বোনাস সংক্রান্ত বিষয়ে প্রভাষক দ্বীন ইসলামের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষক লাঠি হাতে তুলে নেন এবং প্রকাশ্যে তাঁকে মারধর করেন। এতে দ্বীন ইসলামের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় বলে জানা গেছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আরও অভিযোগ করেন, জহির রায়হান দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাঁকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা বিতর্ক, যার মধ্যে রয়েছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য, অতিরিক্ত ফি আদায় এবং আর্থিক অপব্যবহার। বক্তারা বলেন, জহির রায়হান প্রকৃত অর্থে প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না, বরং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি এই পদে আসীন হয়েছেন।
বাংলা বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “একজন শিক্ষক যখন আরেকজন শিক্ষককে মারধর করে, তখন ছাত্রদের কাছে আমরা কী শিক্ষা দিব? এ ঘটনায় শুধু শিক্ষক সমাজ নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গন লজ্জিত।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শাহ আবুল হাসিম বলেন, “জহির রায়হান দীর্ঘদিন ধরেই সহকর্মীদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। আজ দ্বীন ইসলাম শিকার হলেও আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি।”
অভিভাবকরাও মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুমদি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া শ্যামল বলেন, “এ ধরনের ব্যক্তি যদি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালান, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা কোথায় যাবে?”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন এবং পৌর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, অতীতেও জহির রায়হানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বক্তারা ঘোষণা দেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন।
এদিকে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরাও বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের আচরণে দীর্ঘদিন ধরে তারা হয়রানির শিকার। এমন পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জহির রায়হানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কিশোরগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শত শত শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই উত্তাল অবস্থানে শিক্ষা পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
#হোসেনপুর #শিক্ষা_খাত #লাঞ্ছনা #প্রধান_শিক্ষক #বাংলাদেশ_সংবাদ
Post a Comment