পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরমে, ৩১ পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৮ জন

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ৩১টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক দিয়ে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এই সংকটের ফলে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাকুন্দিয়ার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বাস্তবে ৩০ শয্যার সুবিধা পাচ্ছে। ৩১টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের মধ্যে মাত্র সাতজন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন এবং একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আছেন। বাকি ২০টি পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য এবং তিনজন চিকিৎসক অন্যত্র প্রেষণে রয়েছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, গাইনী বিশেষজ্ঞ না থাকায় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে অপারেশন থিয়েটার সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর পাশাপাশি ভর্তি থাকেন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকরা দিনরাত একটানা সেবা দিচ্ছেন, যা তাদের উপর মানসিক ও শারীরিক চাপ বাড়িয়ে তুলেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালটিতে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও তা চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ থাকলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরের ক্লিনিকে যেতে হয়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি সেবার মানেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এমন অবস্থায় রোগীদের অনেক সময়েই কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে কিংবা বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক থাকলেও অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত। এ ছাড়া নার্স, টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও জনবল সংকট রয়েছে।

পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের চুন্নু মিয়া জানান, “আমার ভাই হাসপাতালে ভর্তি, কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।” আরেকজন, এগারসিন্দুর ইউনিয়নের বরকত উল্লাহ বলেন, “গত মাসে আমার বোনের সিজারের দরকার হলে আমরা পাকুন্দিয়া হাসপাতালে আসি। কিন্তু গাইনী চিকিৎসক না থাকায় তাকে কিশোরগঞ্জের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বাধ্য হই।”

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজিবুল হক বলেন, “আমরা প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে গড়ে ৬০০ রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। চিকিৎসক কম থাকায় আমাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যার ফলে ক্লান্তি চরমে পৌঁছেছে।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর-এ-আলম বলেন, “অপারেশন থিয়েটার প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শুধুমাত্র গাইনী চিকিৎসকের অভাবে। আমরা চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

চিকিৎসক সংকটের ফলে শুধু রোগীরা নয়, বরং পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়েছে পাকুন্দিয়ায়। স্থানীয়রা দ্রুত এই সংকট সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন, যাতে করে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পুনরায় সচল হয় এবং জনগণ ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।

#পাকুন্দিয়া #স্বাস্থ্যখাত #চিকিৎসকসংকট #কিশোরগঞ্জ #সরকারিহাসপাতাল #জনস্বাস্থ্য

Post a Comment

Previous Post Next Post