কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলায় ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের কুড়িমারা গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ হারায় নুসরাত নামের মাত্র ৯ বছরের এক শিশু। নিহত নুসরাত কুড়িমারা গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত।
স্থানীয়রা জানান, দুপুরের দিকে নুসরাত প্রতিদিনের মতো বাড়ির পাশে খেলাধুলায় মেতে ওঠে। একপর্যায়ে খেলতে খেলতে সে কুড়িমারা গ্রামের সুয়েজ খানের ফিসারির পুকুরের দিকে চলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, অসাবধানতাবশত পা পিছলে সে পুকুরে পড়ে যায় এবং সাঁতার না জানায় পানির নিচে তলিয়ে যায়।
পরিবারের লোকজন দীর্ঘ সময় মেয়েটিকে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এবং খোঁজাখুঁজি শুরু করে। প্রথমে সম্ভাব্য আশেপাশের এলাকায় খুঁজে না পেয়ে পরে স্থানীয়রা ধারণা করেন, সে পুকুরে পড়ে যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসী এবং স্থানীয় উদ্ধারকারীরা পুকুরে অনুসন্ধান চালান।
ঘণ্টাখানেক পর স্থানীয়দের চেষ্টায় অবশেষে পুকুর থেকে নিথর অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছোট্ট নুসরাতকে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নুসরাতের এমন অকাল মৃত্যুতে পুরো কুড়িমারা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। স্থানীয়রা জানান, নুসরাত ছিল খুবই প্রাণবন্ত ও মেধাবী শিশু। তার এই আকস্মিক মৃত্যু কারও কল্পনাতেও ছিল না।
এ বিষয়ে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এটি নিছক দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই, তাই নিয়মিত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এদিকে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা। তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে খোলা পুকুরপাড়ে শিশুদের একা যাওয়াটা অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নেমে এসেছে শোক। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, নুসরাত নিয়মিত ক্লাস করত এবং পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিল। তার মৃত্যুতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই মর্মাহত।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবছরই এ ধরনের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে যেসব এলাকায় খোলা জলাশয় রয়েছে। সাঁতার শেখার ব্যবস্থা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি করলে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব।
নুসরাতের এ মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি করুণ বার্তা। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সময় এসেছে সচেতনতার নতুন অধ্যায় শুরুর।#নুসরাত #হোসেনপুর #কিশোরগঞ্জ #শিশুমৃত্যু #পানিডুবি #বাংলাদেশ #স্থানীয়সংবাদ #দুঃখজনকঘটনা #সচেতনতা
Post a Comment