ভৈরবে ভাঙনের ঝুঁকিতে যমুনা তেল ডিপো ও বিএডিসি সার গুদাম ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে কাজের ধীরগতির অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত যমুনা অয়েল ডিপো ও বিএডিসি সার গুদাম বর্তমানে ভয়াবহ নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ প্রস্তুত করলেও তা নির্ধারিত সময়ে নদীতে ফেলা হয়নি, ফলে ব্যাগগুলো এখন পানির নিচে ডুবে আছে এবং কার্যকারিতা হারিয়েছে।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট রাতে মেঘনা নদীর প্রচণ্ড স্রোতে যমুনা অয়েল কোম্পানির বাউন্ডারি দেয়াল, পাশের দোকানপাট ও ঘরবাড়ি এবং পৌর বাইপাস সড়কের একাংশ বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে। এর পরপরই পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে।

তবে গত বছর শেষের দিকে এবং চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ভাঙন ঠেকাতে নতুন করে আবারও কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রায় এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে আমিন কোম্পানিও রয়েছে, ২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার দায়িত্ব পায়। গত এপ্রিলের শেষ দিকে পাউবো ৭ থেকে ৮ শত জিও ব্যাগ বালু দিয়ে ভরাট করে প্রস্তুত করে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেগুলো নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়নি। ফলে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে জিও ব্যাগগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

ডিপো ইনচার্জ মতিউর রহমান জানান, “গত বছর যেভাবে ভাঙনে বড় ক্ষতি হয়েছিল, এবারও যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ডিপোর জেটি এবং মূল ভবন নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। আমরা বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি।”

একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএডিসি ভৈরব অফিসের সহকারী পরিচালক শিপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, “আমরা বারবার অনুরোধ করছি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে স্থাপনা রক্ষা করতে, কিন্তু কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। প্রস্তুতকৃত ব্যাগগুলো এখন পানির নিচে।”

স্থানীয় বাসিন্দা লিজা বেগম বলেন, “গত বছর আমাদের ২০টির মতো ঘর ও দোকান নদীতে তলিয়ে গেছে। এবারও ভাঙনের আশঙ্কায় আমরা আতঙ্কে আছি। অনেক দিন ধরে বালু দিয়ে বস্তা ভরছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফেলা হয়নি।”

সেলুন মালিক চণ্ডীদাস বলেন, “আমার সেলুনসহ আশপাশের প্রায় ১৭-১৮টি ঘর গত বছর ভাঙনে গেছে। এবারও পানি খুব কাছে চলে এসেছে, অথচ এখনো কোনো ব্যাগ ফেলা হয়নি। আমরা পরিবার নিয়ে ভয় নিয়ে বসবাস করছি।”

এলাকার আরও অনেকে, যেমন হারুন মিয়া, অভিযোগ করেন যে কয়েক মাস ধরে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হলেও ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা আশঙ্কা করছেন, আবারও ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি দায়ী থাকবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিও ব্যাগ মজুত আছে। আমরা ঈদের পরপরই ঘূর্ণন অঞ্চলে ডাম্পিং শুরু করবো এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি।”

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন জানিয়েছেন, “আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, খুব শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।”

তবে স্থানীয়দের আস্থা ফিরছে না। তারা বলছেন, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তব উদ্যোগই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এ অবস্থায় দ্রুত ও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শুধু স্থানীয় স্থাপনা নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের তেল ও সার সরবরাহ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

#ভৈরবনদীভাঙন #যমুনাতেলডিপো #বিএডিসিসারগুদাম #পাউবোরগাফিলতি #নদীভাঙনপ্রতিরোধ #ভৈরবসংবাদ #নদীভাঙন

Post a Comment

Previous Post Next Post