জনবল সংকটে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা

কুলিয়ারচর প্রতিনিধি:

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৮ সালে হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হলেও এখনো পুরোনো জনবল কাঠামোতেই চলছে এর কার্যক্রম, যার ফলে প্রতিদিন চিকিৎসা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন শত শত রোগী।

চিকিৎসক সংকটের কারণে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সেবায় মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেখানে ১৪ জন কনসালটেন্ট চিকিৎসক থাকার কথা, সেখানে আছেন মাত্র ২ জন। আর ১৯টি মেডিকেল অফিসারের পদে কর্মরত মাত্র ৩ জন। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) পদগুলো পুরোপুরি শূন্য রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকায় অনেকে চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন অথবা নিরুপায় হয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকের দ্বারস্থ। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রোগীরা পড়ছেন আরও বড় সংকটে।

নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না থাকাও একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ সাধারণ ওষুধের সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফলে রোগীদের চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে, যা জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

নার্স পদে মোট ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন থাকলেও তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ডেপুটেশনে অন্যত্র অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, হাসপাতালের সহায়ক কর্মীদের অবস্থাও শোচনীয়। ১০ জন পরিছন্নকর্মীর জায়গায় রয়েছেন মাত্র ১ জন, ৫ জন আয়ার বিপরীতে আছেন মাত্র ২ জন এবং ওয়ার্ডবয়ের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র ১ জন।

উপজেলার ছয়টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকেও একই ধরনের জনবল ও ওষুধ সংকট বিরাজ করছে। ৬ জন উপসহকারী মেডিকেল অফিসারের জায়গায় আছেন মাত্র ২ জন, যা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে প্রায় অচল করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আদনান আখতার বলেন, “প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা মানসম্মতভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার জানানো হয়েছে এবং শূন্য পদে নিয়োগের জন্য চিঠিও পাঠানো হয়েছে।”

জেলা সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্মা জানান, “জনবল সংকট নিরসনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়।”

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পরিবর্তন আসছে না। তাঁদের আশঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ ও জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো কার্যকর পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্ট মহল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জনবল ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে উচ্চমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

#কুলিয়ারচর #স্বাস্থ্যসেবা #চিকিৎসকসংকট #উপজেলাহাসপাতাল #বাংলাদেশস্বাস্থ্য

Post a Comment

Previous Post Next Post