দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ভেঙে দিয়েছি পিন্ডির দাসত্ব করার জন্য নয়: আসিফ মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণ দিল্লির দমন-পীড়নের শিকল ছিঁড়ে আজ স্বাধীন রাষ্ট্র গড়েছে, পিন্ডি, ওয়াশিংটন বা মস্কোর মতো পরাশক্তির অধীন হতে নয়। তিনি বলেন, "আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি কারো দাসত্বে ফেরার জন্য নয়।"

রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে তিনি এসব কথা জানান। সেখানে তিনি শুধু অতীত নয়, বর্তমান রাজনীতি এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও সরব হয়েছেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, "স্বাধীনতা অর্জন এক বিষয়, কিন্তু তা রক্ষা করাই আসল চ্যালেঞ্জ। এই লড়াই যেন শেষ হওয়ার নয়। রাজপথের আন্দোলন আমার চেনা পথ। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছু ছেড়ে রাজপথে ফিরে যাই, কারণ সেটাই আমার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। তবে দায়িত্ববোধ আমাকে রাজপথে থাকা লাখো তরুণের প্রতিনিধি হয়ে থাকতে বাধ্য করে।"

তিনি মন্তব্য করেন, সরকারে থাকা এখন যেন এক দ্বিমুখী চাপের মধ্যে চলা। "সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে, তা যদি আমাদের আওতার বাইরে হয়েও জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে, আমাদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। আবার যখন জনগণ রাজপথে নামে, তখন রাষ্ট্রের ভরকেন্দ্র আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে। মনে করা হয় আমরা ইন্ধন দিচ্ছি। এই দ্বিমুখী অবস্থান অত্যন্ত জটিল, তবে আমরা আপসহীন।"

আসিফ মাহমুদের ভাষায়, "এই উপদেষ্টা পরিষদ সব বাধা উপেক্ষা করেও জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যতদিন আমরা ক্ষমতায় থাকব, জুলাইয়ে শুরু হওয়া গণ-আন্দোলনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হব না। যদি কখনও শহীদদের স্বপ্ন থেকে সরে যেতে হয়, তাহলে এই জায়গায় আমার থাকার আর প্রয়োজন নেই।"

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়েও তিনি বক্তব্য দেন। তার মতে, এটি জনগণের আরেকটি বিজয়। "আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল যারা এস্টাবলিশমেন্টের ভেতরে এখনো রয়েছেন, তারা সতর্ক হোন। কারণ পরবর্তী পদক্ষেপে সামান্য অসতর্কতা আপনাদের পতনের কারণ হতে পারে। জুলাইয়ের দাবি মানতে হবে—এটা এড়িয়ে বাংলাদেশে টিকে থাকা সম্ভব নয়।"

তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় চলমান বিভ্রান্তিকর প্রচারণা নিয়েও কথা বলেন। একটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, “আমি কিছু ফটোকার্ড দেখেছি যেখানে বলা হচ্ছে মাহফুজ ভাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা করছেন। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বরং বরাবরই নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এবং কার্যকর পন্থা খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছেন। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তার নামে মিথ্যাচার গ্রহণযোগ্য নয়।”

আসিফ মাহমুদের এই পোস্ট দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এমন সময়ে যখন দেশে রাজনৈতিক রদবদল, গণ-আন্দোলন ও দল নিষিদ্ধের মতো ব্যাপক ঘটনা ঘটছে, তখন তার এই বক্তব্য ক্ষমতার ভেতরকার বাস্তবতা ও রাজনৈতিক জটিলতা উন্মোচন করেছে।

তিনি যে জনগণের প্রতিনিধিত্ব এবং আন্দোলনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ তা এ পোস্টের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। এটি শুধুমাত্র এক উপদেষ্টার ব্যক্তিগত মত নয়, বরং একটি চলমান রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি, যা এই মুহূর্তে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post