ফেসবুক-ইউটিউবে আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা বললেই গ্রেপ্তার;পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা বাস্তবায়ন

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেছে সরকার। শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও দলটির পক্ষে যেকোনো ধরনের বক্তব্য, পোস্ট, কমেন্ট বা প্রচারণা এখন থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে কেউ কথা বললে, সেই ব্যক্তি আইনের আওতায় পড়বে এবং পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে।

সরকারি সূত্র বলছে, সোমবার থেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ের সব পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে, যাতে দলটির পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণা, সভা-সমাবেশ বা ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার রোধ করা যায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এতদিন দলটি নিষিদ্ধ না থাকায় গ্রেপ্তার করতে গেলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। তবে এখন নিষেধাজ্ঞার পর আইন প্রয়োগে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, সরকার প্রদত্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই ধারা অনুসারে যেকোনো সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব।

এছাড়াও সাইবার স্পেসে যারা দলটির পক্ষে সক্রিয়, যেমন—ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া, ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করা, বা সেই পোস্টে মন্তব্য করা, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে। এমনকি বিদেশে অবস্থান করেও কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে ডিজিটাল মাধ্যমে সক্রিয় থাকলে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করে মামলা দেওয়া হবে এবং দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “পুলিশ আইনের আলোকে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে, পুলিশ তেমনি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক এক বিবৃতিতে জানান, “নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সব এসপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, দলের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কাজ শুরু করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দলের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করতে মেটাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে ভেরিফায়েড পেজটির প্রায় ৪০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে জানান, “নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই অনলাইন বা অফলাইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না।”

আইনি বিশ্লেষক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “সরকারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর এখন পুলিশ আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করতে পারবে। পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা এখন প্রয়োগযোগ্য।”

সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা জানান, “কোনো সংগঠন নিষিদ্ধ না হলে তার সদস্যদের শুধু রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা যায় না। কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এখন সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকারি পদক্ষেপ এখন বহুমাত্রিক। অফলাইন থেকে অনলাইন, দেশে থেকে বিদেশ—সব জায়গাতেই দলটির কার্যক্রমের ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সরকারের এই কঠোর অবস্থান দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Post a Comment

Previous Post Next Post