পাবনায় কবরস্থান কমিটি নিয়ে বিএনপির দ্বন্দ্ব, সভাপতি পদে ভোট নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তিনটি গ্রাম—বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক)—মিলে গঠিত এ কবরস্থানের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনার ঝড়।

বিরল এই নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরে বিভাজন ও গ্রুপিংও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কমিটির সভাপতি পদ দখলকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা শেষ পর্যন্ত থানার দারস্থ হওয়া পর্যন্ত গড়ায়।

উল্লেখ্য, এ নির্বাচনের জন্য গঠিত হয়েছে সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার। তাঁর মতে, দুজন প্রার্থী ৩০ হাজার টাকা করে মনোনয়ন ফি জমা দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন এবং তফসিল অনুযায়ী তাঁদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দও সম্পন্ন হয়েছে। প্রার্থীরা হলেন—আব্দুল কুদ্দুস (প্রতীক: ছাতা) ও শরিফুল ইসলাম (প্রতীক: চেয়ার)।

নির্বাচনের খরচ নির্বাহে মনোনয়ন বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকা ব্যবহৃত হবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনের প্রধান।

আগামী শনিবার, ২৪ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থানসংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে ব্যালটের মাধ্যমে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৮০০ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, যাঁদের প্রত্যেকটি পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই নির্বাচন ঘিরে এলাকায় এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনের মতোই চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা, গণসংযোগ ও আপ্যায়নের ধুম। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা দিচ্ছেন কবরস্থানের উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামীণ এক কবরস্থান কমিটির নির্বাচন ঘিরে যে পরিমাণ আলোচনা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা এর আগে দেখা যায়নি। অনেকেই এই নির্বাচনকে গ্রামের রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন, যেখানে প্রভাব বিস্তার, নেতৃত্ব এবং দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এখনো বিরাজমান। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। কমিটির নেতা এবং নির্বাচন পরিচালনাকারীরা নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আশাবাদী।

পাবনায় এই কবরস্থান নির্বাচন একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে সামাজিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাব একই মঞ্চে মুখোমুখি। সামান্য একটি নেতৃত্ব নির্বাচনের পেছনে এমন রাজনৈতিক তৎপরতা ও জনসাধারণের অংশগ্রহণ গ্রামীণ রাজনীতির নতুন এক বাস্তবতা তুলে ধরছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post