কিশোরগঞ্জে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দুই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীকে আটক করেছে পুলিশ।#কিশোরগঞ্জ #মাদকবিরোধীঅভিযান #আওয়ামীলীগ #আইনজীবীগ্রেফতার #বাংলাদেশসংবাদ

কিশোরগঞ্জে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে দুইজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ভোররাতে কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কোদালিয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের বহনকারী একটি প্রাইভেট কার থেকে বিদেশি মদের বোতলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন—কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী সানোয়ার হোসেন রুবেল (৪৭) এবং মিঠামইন উপজেলার ঢাকি ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ভূঁইয়া রুবেল (৪৬)। এছাড়া তাদের সঙ্গে থাকা প্রাইভেট কারের চালক মো. সাইম (২৫)কেও একই অভিযানে আটক করা হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ কোদালিয়া এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসায়। সেখানে ভোররাতে একটি প্রাইভেট কার থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশির সময় গাড়ির ভেতরে বেশ কয়েক বোতল বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িতে থাকা তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, “মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে পাকুন্দিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”

আদালতের সিদ্ধান্ত ও অতীত রেকর্ড

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) জালাল উদ্দিন জানান, “গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। অভিযুক্তদের পক্ষে কেউ জামিনের আবেদনও করেননি।”

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি নিবন্ধন কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, “এই দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫ আগস্টের পর করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা ছাড়াও সংঘর্ষ, মারধর, হুমকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।”

স্থানীয় রাজনীতিতে আলোড়ন

আটকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা একে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।

তবে প্রশাসন বলছে, মাদকদ্রব্যসহ কাউকে পাওয়া গেলে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নয়, প্রমাণের ভিত্তিতেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখযোগ্য বিষয়

অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

পূর্বে করা মামলাগুলোর রেকর্ড ইতোমধ্যেই তদন্তাধীন রয়েছে।

গ্রেফতারের পর আদালতে তোলা হলেও তাদের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়নি।


মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ সক্রিয়

সম্প্রতি কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে প্রশাসন। পুলিশের দাবি, রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব না দেখে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post