বন্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট সব পেজ!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সকল অনলাইন কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিষিদ্ধ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ও অনানুষ্ঠানিক ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, ওয়েবসাইট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম।

রোববার (১১ মে) সকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, “উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলটির অনলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে শিগগিরই পরিপত্র জারি করা হবে। তারপর বিটিআরসির মাধ্যমে মেটা, গুগলসহ আন্তর্জাতিক সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে, যাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।”

ফেসবুকে চার মিলিয়ন ফলোয়ার, অনলাইন উপস্থিতি শক্তিশালী ছিল আওয়ামী লীগের
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে দলটির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে, যার অনুসারীর সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। দলটির বিভিন্ন কর্মসূচি, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, রাজনৈতিক বার্তা ও প্রচারণা এই পেজের মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করা হতো।

তবে, শনিবার (১০ মে) রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দলটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসার পরপরই ফেসবুক পেজে একটি প্রতিবাদমূলক পোস্ট দেওয়া হয় এবং পরে দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও সেখানে প্রকাশ করা হয়।

জুলাই ঐক্যের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে জুলাই ঐক্য নামে পরিচিত একটি বৃহত্তর নাগরিক প্ল্যাটফর্মের টানা আন্দোলন। তারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা তাদের দাবি আরও জোরালো করে তোলে।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ অবশেষে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। অনলাইনে নিষেধাজ্ঞা সেই সিদ্ধান্তেরই অংশবিশেষ।

নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বিতর্কের সম্ভাবনা
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং ডিজিটালি অকার্যকর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী বলে মনে হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, "যেকোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বন্ধ করবার আগে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, গণতান্ত্রিক ভারসাম্য ও জনমত বিবেচনা করা উচিত। একতরফাভাবে একটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা দেশের রাজনীতিকে সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।"

এদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে অভিহিত করছেন। তারা বলছেন, এটি একটি একচেটিয়া সিদ্ধান্ত এবং এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ও আইনগত লড়াই চলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post