‘নাগরিক কোয়ালিশনে’ নেই ইসলামি কোন সংগঠন, সমালোচনা ও ক্ষোভ আলেমদের

নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে 'নাগরিক কোয়ালিশন' নামের একটি নতুন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ ঘিরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এই জোট একটি সম্মেলনের আয়োজন করলেও সেখানে কোনো ইসলামী রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের ঝড়।

এই সম্মেলনে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরার কথা থাকলেও, উল্লেখযোগ্য ইসলামী দলগুলোর কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ বিগত কিছু বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধাচরণে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ একাধিক ইসলামি রাজনৈতিক দল। এই বাস্তবতায় ইসলামী ঘরানার সংগঠনগুলোর বাদ পড়াকে রাজনৈতিক বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যমূলক বর্জন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহদী নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আন্দোলনের সময় ইসলামী দলের কর্মীরাই রাজপথে ছিলো, রোদে পুড়েছে, রক্ত দিয়েছে। অথচ সংস্কারমূলক উদ্যোগের সময় তাদের ঠাঁই হয়নি। এটা দুঃখজনক এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ।”

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আশরাফ মাহদী আরও উল্লেখ করেন, “যারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিজ জীবন বিপন্ন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তারাই নাগরিক কোয়ালিশনের তালিকা থেকে বাদ পড়লো। এই জোট কি তবে কেবল শহুরে সুবিধাভোগীদের প্ল্যাটফর্ম?”

ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা হাবিবুর রহমান মিছবাহ আরও কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “হুজুররা যেন আর ভাড়াটে সৈনিক হয়ে না থাকে। ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিবার ইসলামী রাজনীতির নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলো, কিন্তু নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না। এবার অন্তত সম্মেলন থেকে বাদ দিয়ে তাদের গুরুত্বহীন করে দেওয়া হলো।”

বিভিন্ন ইসলামী দলের সমর্থকরাও একই ধরনের অভিযোগ তুলে বলছেন, যারা দেশের বাস্তব রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে আসছে, তাদের অনুপস্থিতি এই জোটের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। একজন ব্যবহারকারী, তারেক হাসান, মন্তব্য করেন, “হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনের অবদান কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? তারা মিডিয়ায় না এলেও মাঠে ছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে সংস্কারের কথা ভাবা নিছক বিভ্রান্তি।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়ত, খেলাফত মজলিস—এদের প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত করাই ছিলো সময়ের দাবি। আন্দোলন করে যদি কোনো গোষ্ঠীকে অবহেলার শিকার হতে হয়, তবে সেই আন্দোলন কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।”

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাগরিক সমাজকে প্রতিনিধিত্বমূলক করতে হলে সকল ঘরানার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। তা না হলে এই উদ্যোগকে একপাক্ষিক ও পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।

মুহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম বলেন, “সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যেসব দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত না করা সামগ্রিক রাজনৈতিক ঐক্যের ধারণার পরিপন্থী।”

নাগরিক কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে সমালোচকদের মতে, জনসম্পৃক্ত ও গ্রহণযোগ্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হলে নীতিগত অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে কোনো বৈষম্য চলবে না।

অন্যদিকে, ইসলামী দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, তারা এই ধরনের বর্জনমূলক আচরণের প্রতিবাদে ভবিষ্যতে আলাদা রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা ভাবতে পারেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রক্রিয়ায় নিজেদের সক্রিয় অবস্থান জানান দিতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা।

এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজে প্রশ্ন উঠছে—অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কার কি আদৌ সম্ভব, যখন বাস্তব আন্দোলনের কারিগররাই এতে নেই?

Post a Comment

Previous Post Next Post