কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থেকেও একজন সিনিয়র নার্স নিয়মিত বেতন তুলছেন, অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী আত্মীয়ের ছত্রছায়ায় অনিয়মের।#স্বজনপ্রীতি #সরকারিসেবা #দুর্নীতি #কিশোরগঞ্জ #স্বাস্থ্যখাত

স্বাস্থ্যখাতের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক সিনিয়র নার্সের অনুপস্থিতি ও বেতন উত্তোলনের ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকলেও কোনো প্রকার দাপ্তরিক ছুটি ছাড়াই তিনি নিয়মিত বেতন তুলছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রাজিব চন্দ্র সূত্রধর নামের ওই সিনিয়র স্টাফ নার্স দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ডিউটিতে না থেকেও প্রতিমাসে সম্পূর্ণ বেতন গ্রহণ করে আসছেন। অভিযোগের তীর প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিস রঞ্জন সরকারের দিকেও, যিনি রাজিবের আত্মীয় বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজিবের অনুপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে হাসপাতালের হাজিরা রেজিস্টারে। প্রতিবেদকের হাতে থাকা ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের হাজিরা খাতায় রাজিবের অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ। এছাড়া, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের রেকর্ডেও একই ধরনের অনুপস্থিতির তথ্য মিলেছে।

একটি সংযুক্ত চিঠি থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪ থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত রাজিবকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করার লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এতে প্রতীয়মান হয়, এই সময়ে তিনি অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “রাজিব চন্দ্র নিয়মিত হাজিরা না দিয়েও বেতন নিচ্ছেন, এটি সরাসরি প্রশাসনিক দুর্নীতি। পরিচালকের ছত্রছায়ায় এই স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটছে।”

অভিযোগ উঠেছে, সেবা তত্ত্বাবধায়ক আঁখি রানী বণিক এ অনিয়মে পরোক্ষভাবে জড়িত। বেশ কয়েকজন সিনিয়র নার্স দাবি করেছেন, প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকেও কোনো কর্মচারীর নিয়মিত বেতন পাওয়া সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজিব চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। অফিসের কিছু লোক আমাকে ফাঁসাতে চাইছে, তাদের দুর্নীতি আড়াল করতেই এসব করছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সেবা তত্ত্বাবধায়ক এবং এনএসজি রোজিনার অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিলাম। এখন তারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগে জড়াচ্ছে। আমি কেবল পাওনা ছুটির দাবি করেছি।”

তবে এসব অভিযোগের জবাবে সেবা তত্ত্বাবধায়ক আঁখি রানী বণিক বলেন, “রাজিব ৯ ও ১০ মে নিয়মিত ডিউটি করেছেন।” যদিও হাসপাতালের হাজিরা রেজিস্টারে উক্ত দুইদিনে রাজিবের অনুপস্থিতির স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমে ছুটি নেওয়ার কথা বললেও পরে আঁখি রানী জানান, রাজিব এপেন্ডিক্স অপারেশনের কারণে কিছুদিন কাজ করতে পারেননি। কিন্তু কোনো লিখিত ছুটির আবেদন বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিস রঞ্জন সরকার বলেন, “রাজিব কখনোই অনুপস্থিত ছিলেন না। তিনি এখনো নিয়মিত অফিস করছেন।”

তবে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও রাজিবকে সামনে আনতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে বলেন, “রাজিবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানানো হোক, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পরিচালক দাবি করেন, রাজিব তার আত্মীয় নন। যদিও সেবা তত্ত্বাবধায়ক আঁখি রানী বলেছেন, “সে পরিচালক স্যারের আত্মীয় (শ্যালক)।”

বর্তমানে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় রাজিবের অনুপস্থিত থাকা দিনগুলোতে বেতন উত্তোলনের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই ঘটনায় হাসপাতালটির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, সেবার মান ও সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগকে আরও ঘনীভূত করেছে। এতে করে দেশের স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবিতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post