গ্রীষ্মের ফলের রাজত্বে লিচুর অবস্থান বরাবরই শীর্ষে। রসালো, মিষ্টি ও সুগন্ধি এই ফলটির জন্য বাংলাদেশজুড়েই রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই এটির দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। তবে স্বাদের পাশাপাশি লিচুর আকার ও রঙ আকর্ষণীয় করতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কিছু চাষির বিরুদ্ধে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জনপ্রিয়তায় মঙ্গলবাড়িয়া এখন শীর্ষে
দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা গাইবান্ধার মতো ঐতিহ্যবাহী লিচু উৎপাদনকারী জেলা ছাড়িয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে মঙ্গলবাড়িয়া। একসময় কেবল স্থানীয় চাহিদা মেটাতে এই এলাকার লিচু উৎপাদিত হতো, কিন্তু এখন তা রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সিলেট, সুনামগঞ্জ এমনকি দেশের বাইরেও রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর প্রতি হালি (৪টি) দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যেখানে অন্যান্য এলাকার লিচুর দাম মাত্র ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
চাষিদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের অভিযোগ
সাধারণ ক্রেতারা এই অতিরিক্ত দামের ফলে তাদের প্রিয় ফলটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাজারে এই লিচু খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি সরাসরি বাগানে গিয়েও অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন। কারণ, চাষিরা অধিক লাভের আশায় লিচু রপ্তানির জন্য আগেই মজুদ করে ফেলছেন।
তবে শুধু দাম নয়, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই আরেকটি বিতর্কিত প্রসঙ্গ উঠে এসেছে—অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, লিচুর রং ও আকার আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কিছু চাষি অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক ব্যবহার করছেন, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চাষিদের দাবি ও কৃষি অফিসের অবস্থান
লিচু চাষি তৌহিদ মিয়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, “আমরা কৃষি অফিসের নির্দেশনা মেনেই কীটনাশক ব্যবহার করি। যদি এসব না দেই, তাহলে পোকামাকড়ের আক্রমণে একটাও লিচু গাছে টিকে থাকবে না।”
পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ নূর-ই আলম জানান, “মঙ্গলবাড়িয়ায় প্রায় ৫ হাজারের বেশি লিচুগাছ রয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তবে আমরা চাষিদের সতর্ক করে দিচ্ছি কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে। আমরা পরামর্শ দিয়েছি যাতে ফল সংগ্রহের ১৫-২০ দিন আগে স্প্রে করা হয়, যেন মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে।”
বাজারে মিলছে না, রপ্তানিতে আগ্রহ তুঙ্গে
মজার বিষয় হলো, জেলা শহরের বাজারগুলোতে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু প্রায় অদৃশ্য। স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ব্যাপারীরা আগেভাগেই চাষিদের কাছ থেকে গাছ কিনে নিচ্ছেন। বাজারে এনে বিক্রি করলে লাভ থাকে না, কারণ মূল্য এত বেশি যে সাধারণ ক্রেতারা কিনতেই পারেন না। ফলে এখন এই লিচু চাষের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে মূলত রপ্তানি ও উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ।
সাধারণ মানুষের হতাশা
এই লিচু দেখতে এবং খেতে যেমন চমৎকার, দাম তেমনি অসাধারণ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই সরাসরি মঙ্গলবাড়িয়ায় ছুটে আসছেন, কিন্তু সাধ্যের বাইরে দাম হওয়ায় তারা ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
Post a Comment