কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ভৈরবে ২ জন নিহত সহ মোট ৪ জন

কিশোরগঞ্জ জেলাজুড়ে চলমান বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভয়াবহতায় গতকাল (শনিবার) মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে অন্তত ৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ভৈরব উপজেলায় ২ জন, কুলিয়াচরে ১ জন এবং করিমগঞ্জে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে—যদিও করিমগঞ্জে নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় জেলার সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে হঠাৎ করেই প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক মিয়া (৬৫) এবং একই উপজেলার শ্রীনগরের যুবক ফয়সাল মিয়া (২৮)। এছাড়া কুলিয়াচর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যান মো. কবির হোসেন (২৫)। করিমগঞ্জেও একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেলেও, সংবাদ লেখা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

কৃষিকাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শিকার

নিহত কবির হোসেন প্রতিদিনের মতো শনিবার দুপুরেও নিজের জমিতে কাজ করতে যান। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে আসলে তিনি জমি থেকে ঘরে ফিরছিলেন। এই সময় আকস্মিক বজ্রপাত তাঁর ওপর আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই কবির নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

ভয়ে শঙ্কিত কৃষক-শ্রমজীবী মানুষ

ভৈরবের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রতিদিনই যেন কোনো না কোনো জায়গায় বজ্রপাতে মানুষ মরছে। আমরা গরিব মানুষ, জমিতে কাজ না করলে সংসার চলবে না। কিন্তু প্রাণ বাঁচিয়ে কিভাবে কাজ করবো?” স্থানীয় স্কুল, বাজার ও সামাজিক পরিসরে বজ্রপাত নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বজ্রপাত নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ, বাড়ছে মৃত্যু

গত এক মাসে কিশোরগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে প্রায় ১২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় জেলার বাসিন্দারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে কৃষি-নির্ভর পরিবারগুলো এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের সতর্কতা ও পরামর্শ

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়কাল বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় এবং বজ্রপাতের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে আকাশে জলীয়বাষ্প ও বৈদ্যুতিক চার্জ বেড়ে যাওয়ার কারণে হঠাৎ করেই বজ্রঝড় সৃষ্টি হয়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এই মেঘ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এই সময়ে বাড়ির বাইরে বিশেষ করে খোলা জায়গায় কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ এক কর্মকর্তা জানান, “বজ্রঝড় শুরু হলে গাছের নিচে কিংবা খোলা মাঠে অবস্থান না করার পরামর্শ দিচ্ছি। সম্ভব হলে বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিতে হবে এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।”

প্রতিরোধে স্থানীয় উদ্যোগ প্রয়োজন

জরুরি প্রয়োজন হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা মনে করেন, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে স্কুল, মসজিদ ও হাটবাজারে সচেতনতামূলক মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post