দেশের সংবিধান সংশোধন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে আজ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘নাগরিক কোয়ালিশন’ নামের একটি নতুন নাগরিক প্লাটফর্মের সম্মেলন। তবে আলোচিত এ সম্মেলনে কোনো ইসলামি সংগঠন কিংবা আলেম প্রতিনিধির অংশগ্রহণ না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আজ সন্ধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “২০১৩ সালের গণজাগরণে ইসলামপন্থী শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ইতিহাসের অংশ। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন ৮৪ জনেরও বেশি মাদরাসাছাত্র ও আলেম। হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী সংগঠনসমূহ সেই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।”
তিনি বলেন, “এই রাষ্ট্রে ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক সমাজের একটি বৃহৎ অংশ রয়েছে, যার প্রতিনিধিত্ব হেফাজতে ইসলাম করে থাকে। অথচ আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সংবিধান সংশোধন ও রাষ্ট্র সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সেই ধারার প্রতিনিধিদের একেবারে উপেক্ষা করা হয়েছে।”
মাওলানা ইসলামাবাদী এই ধরণের উদ্যোগকে সচেতনভাবে বিভাজনমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মতো ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের সহাবস্থানের সমাজে আলেম-ওলামাদের বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা গণবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত। এতে যে বৈষম্য ও বিভেদ সৃষ্টি হবে, তা দেশের জন্য ক্ষতিকর।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বৈষম্যমূলক ও জনবিচ্ছিন্ন উদ্যোগ কখনও সফল হয় না। নাগরিক সমাজকে যদি বাস্তবিক অর্থে প্রতিনিধিত্বমূলক, সর্বজনগ্রাহ্য ও গণতান্ত্রিক করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আলেম সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নয়তো এই ধরনের উদ্যোগের প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে না, বরং তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করব।”
সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধকে বিবেচনায় না এনে কেবল একপাক্ষিক বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা কতটুকু কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যে কোনো জাতীয় ঐক্যমূলক প্লাটফর্মে দেশের প্রধান ধর্মীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত আলেম সমাজকে বাদ দিলে, তা কেবল বিভাজন বাড়াবে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের পথ বরং আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে গঠিত কোনো উদ্যোগ গণমানুষের সমর্থন আদায় করতে পারবে না—এমনটাই মতামত দিচ্ছেন বিশ্লেষক মহল। হেফাজতের পক্ষ থেকে এমন ঘরানার সক্রিয় অবস্থান আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলেও অনেকের অভিমত।
Post a Comment