কিশোরগঞ্জ সংবাদ দাতা রাইয়্যান ১৭ মে: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল চর্চার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে পরিচিত 'ভোরের আলো সাহিত্য আসর' তাদের ২২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আজ শনিবার (১৭ মে) কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমী, সংস্কৃতিসেবী ও সম্মানিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত 'ভোরের আলো সাহিত্য আসর' দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কিশোরগঞ্জে সাহিত্য চর্চার এক অগ্রণী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবছরের মতো এবারও সংগঠনটি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে আয়োজিত করে এক মনোজ্ঞ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে মূল পর্ব শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিভাগের সাবেক স্পেশাল জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, “সাহিত্য হচ্ছে জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি। ভোরের আলো সাহিত্য আসর যে নিঃস্বার্থভাবে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। নতুন প্রজন্মের মাঝে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বীজ বপনের জন্য এই সংগঠনের অবদান অবিস্মরণীয়।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ও সাবেক ব্যাংকার মো. মোতাহের হোসেন, যিনি ভোরের আলো সাহিত্য আসরের বর্তমান সভাপতি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের এই পথচলা সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ আমরা ২২ বছর অতিক্রম করেছি। এটি শুধু একটি বর্ষপূর্তি নয়, এটি একটি দায়বদ্ধতার স্মারক—যা আমাদের ভবিষ্যতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সাংবাদিকবৃন্দ। আলোচনায় উঠে আসে সমসাময়িক সাহিত্য আন্দোলন, তরুণ লেখকদের উৎসাহ প্রদান এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সাহিত্যচর্চার গুরুত্ব।
আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য এবং নাট্য পরিবেশনা উপস্থাপন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য দর্শকদের মাঝে দেশপ্রেমের আবেগ জাগিয়ে তোলে। এছাড়া তরুণ লেখক ও আবৃত্তিকারদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সাহিত্য আসরের প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকা তুলে দেওয়া হয়। এতে আসরের দীর্ঘ পথচলার স্মৃতি, সাহিত্যচর্চার বিবরণ এবং সদস্যদের রচনাবলি স্থান পায়।
'ভোরের আলো সাহিত্য আসর'-এর ২২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান স্থানীয় পর্যায়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে বই পড়া, লেখালেখি এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে এই ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।
এই ধরনের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ুক—এই প্রত্যাশা জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
Post a Comment