কুলিয়ারচর "অষ্টগ্রাম অটো রাইস মিলে"র কালো ধোঁয়া ও পঁচা পানির গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

কুলিয়ারচর প্রতিনিধি ; মোঃ সবুজ মিয়া
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের লোকমান খাঁরকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা বর্তমানে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত অষ্টগ্রাম অটো রাইস মিল থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও দূষিত পঁচা পানির তীব্র গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন শতাধিক পরিবার। শুধু পরিবেশ নয়, মিলের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থী, কৃষি এবং মাছ চাষেও।

শনিবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) দুপুরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মিলটির দূষণ কার্যক্রমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মিলটি নিয়মবহির্ভূতভাবে কালো ধোঁয়া ছাড়ার পাশাপাশি পঁচা পানি আশপাশের খালে, জমিতে ও জলাশয়ে ফেলে দিচ্ছে, যার ফলে পুরো এলাকায় বায়ুদূষণের পাশাপাশি পানিদূষণেরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মো. শাকিল খান বলেন, “প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিষাক্ত গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমাদের ছোট ছেলেমেয়েরা এর প্রভাবে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। মিল কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়মকানুন না মেনেই এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।”

ফয়সাল ভূঁইয়া ও ইয়াসিন খান জানান, মিলের ধোঁয়া ও বর্জ্য ফেলার কারণে এলাকার বেশ কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। পুকুরের পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে, মাছ টিকতে পারছে না। পাশাপাশি কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া সেই দূষিত পানি গাছের ক্ষতি করছে, ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

এ ছাড়া এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, রাইস মিল থেকে প্রতিনিয়ত এমন উচ্চ শব্দ আসে যে, শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। কলেজছাত্রী নসি আক্তার বলেন, “আমার পড়াশোনার সময় মাথা ধরেই যায়। এত শব্দে মনোযোগ ধরে রাখা অসম্ভব।”

অন্যদিকে, গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এই মিল যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই চলে, তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। আমরা সাধারণ মানুষ, কিন্তু আমাদের জীবনযাপন দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, মিল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের অভিযোগকে বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে গণজমায়েত করে মিলের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন এবং দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, যদি দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন দ্রুত অষ্টগ্রাম অটো রাইস মিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post