অতিরিক্ত যানবাহন ও অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংয়ের কারণে যানজটে নাকাল কিশোরগঞ্জ পৌর শহর।#যানজট #কিশোরগঞ্জ #অটোরিকশা #ট্রাফিক_জট #বাংলাদেশ_নিউজ

কিশোরগঞ্জ পৌর শহর এখন যেন এক চলমান যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। সরু রাস্তাগুলোতে প্রতিনিয়ত গাদাগাদি করে চলছে হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক, রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যেখানে-সেখানে অটোস্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা দোকান এবং অপ্রতুল পার্কিংয়ের কারণে যান চলাচল একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা বলছেন, মাত্র ১০ মিনিটের পথ পার হতে এক ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে।

শহরের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, “যানজটের কারণে শুধু গাড়ি নয়, হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রোগী ও অফিসগামী প্রত্যেকেই চরম ভোগান্তির মধ্যে আছেন।”

অনুমোদনের বাইরে হাজারো যান

পৌরসভার অনুমোদিত মাত্র ৬০০ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থাকলেও বর্তমানে কয়েক হাজার যান শহরে চলাচল করছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব যান প্রবেশ করছে শহরে। এতে করে যানজটের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা হারাচ্ছে। অনেক চালক অদক্ষ হওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনাও। অনেক সময় প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আবু হানিফ বলেন, “এখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার অটো চলে। রাস্তাগুলো এতটাই সরু যে, একটা গাড়ি অন্যটাকে ওভারটেক করাও কঠিন। তাছাড়া ফুটপাত দখল হওয়ায় চালানোও যায় না ঠিকমতো।”

অপরিকল্পিত পার্কিং ও অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ বাড়ছে

কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেমন—গৌরাঙ্গ বাজার, একরামপুর, আখড়া বাজার, আঠারোবাড়ি কাচারি মোড়—এসব স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল থমকে থাকে। শহরের হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতেও নেই যথাযথ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বরং অনুমোদন নিয়ে করা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং স্পেস বাণিজ্যিকভাবে রেস্টুরেন্ট, শোরুম বা দোকান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশের (টি আই) প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, “শহরের রাস্তাগুলো এমনিতেই সরু। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক থাকায় যানবাহনের চাপ আরও বাড়ছে। মোটরসাইকেল চালকেরা যেখানে-সেখানে পার্কিং করে। এসব কারণে যানজট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।”

তিনি আরও জানান, শহরের বটতলা থেকে একরামপুর পর্যন্ত সড়ক সবচেয়ে বেশি যানজটপ্রবণ। এই পথে অটোরিকশা ও বড় যানবাহন একসঙ্গে চলতে গেলে সংকট চরমে পৌঁছায়।

মৌসুমি শ্রমিকদের আগমনেও বাড়ছে চাপ

শুধু স্থায়ী যানবাহনই নয়, বোরো মৌসুম শেষে হাওরের পানি আসার সময় বেকার হয়ে পড়া অনেকেই শহরে এসে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। ফলে যানবাহনের সংখ্যা আরও বেড়ে যায় এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে কিছুটা শৃঙ্খলা

যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। অবৈধ পার্কিং ও অনুমোদনহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু অভিযান নয়, স্থায়ী সমাধানের জন্য দরকার সুপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অনুমোদিত যানবাহনের সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগ। পাশাপাশি ফুটপাত উন্মুক্ত রাখা, যথাযথ পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করা ও চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

Post a Comment

Previous Post Next Post