কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: রাইয়্যান
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চরপুমদী এলাকায় র্যাব-১৪ এর একটি অভিযানে শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মো. রমজান আলী (৪৫) গ্রেফতার হয়েছেন। ৩ মে (শনিবার) রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে র্যাব-১৪, সিপিসি-২ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করে।
রমজান আলীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শরীফ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘদিন ধরেই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ করছিল র্যাব। অবশেষে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যে অভিযান চালিয়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে শরীফ (৩৫), যিনি শুক্কুর আলীর বাসায় ইফতার শেষে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে ছিলেন, তখন পূর্বপরিকল্পিতভাবে কিছু দুর্বৃত্ত তার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ঘটনাটি ঘটে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামীণ সড়কে। হামলার শিকার শরীফের চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহের নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। তবে সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীফকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি এলাকায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীফের সঙ্গে অভিযুক্তদের দীর্ঘদিন ধরে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই পুরনো দ্বন্দ্ব থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে।
হত্যার ঘটনার পর নিহত শরীফের শ্যালক মো. রুবেল মিয়া বাদী হয়ে ৫ মার্চ কিশোরগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি রুজু হয় মামলা নম্বর ১১/১০৪ হিসেবে। মামলার পরপরই র্যাব এবং পুলিশ আসামিদের শনাক্ত করতে কাজ শুরু করে।
র্যাব-১৪, সিপিসি-২ এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আমরা মামলার পর থেকেই আসামিদের অবস্থান ও গতিবিধি নিয়ে নজরদারি শুরু করি। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এক পর্যায়ে জানতে পারি, অভিযুক্ত রমজান আলী হোসেনপুরের চরপুমদী এলাকায় অবস্থান করছে। এরপরই দ্রুত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে সে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়।”
র্যাবের নির্ভরযোগ্য ও পরিকল্পিত অভিযানে রমজান আলীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। অভিযানের সময় র্যাব সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় থেকে এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন এবং স্থানীয়দের মধ্যে কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় সে বিষয়েও নজর রাখেন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত রমজান আলীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা।
স্থানীয় জনগণ র্যাবের এই সফল অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Post a Comment