নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার দাবিতে দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আজ শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল মহাসমাবেশে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত চলে এই মহাসমাবেশ। সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির ও শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে আগত হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, আলেম-ওলামা ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, এমনকি জেহাদ করতেও প্রস্তুত থাকব।” তিনি আরও জানান, সংগঠনটি আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি বিভাগে নারী অধিকার ইস্যুতে সম্মেলনের আয়োজন করবে। পাশাপাশি আগামী ২৩ মে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হবে।
হেফাজতের ঘোষিত চার দফা দাবি
সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চারটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করে। দাবিগুলো হল:
১. নারী ও পরিবারবিষয়ক জাতীয় কমিশনের বাতিল: হেফাজতের দাবি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সুপারিশ পেশ করেছে। এ ধরনের কমিশন ইসলামী মূল্যবোধ পরিপন্থী বিধায় তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে হবে।
২. সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল: তারা মনে করে, সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের উল্লেখ বাদ দেওয়া হয়েছে, যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ধর্মীয় চেতনার পরিপন্থী।
৩. শাপলা চত্বরসহ সকল ঘটনায় দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: হেফাজত দাবি করে, বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার তারা দাবির তালিকায় রেখেছে।
৪. আন্তর্জাতিক মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ: ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়।
ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় হেফাজতের সক্রিয়তা
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক ইস্যুগুলোতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নারী অধিকারসহ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা ইসলামী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও পরিবার সংক্রান্ত কিছু সরকারি উদ্যোগকে তারা কুরআন-সুন্নাহবিরোধী বলে সমালোচনা করে আসছে।
সমাবেশের শেষ পর্যায়ে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর আবেগময় মোনাজাতে দেশ, জাতি, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয়। তিনি বলেন, “ইসলামের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা প্রতিরোধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”
এই মহাসমাবেশ ও ঘোষিত কর্মসূচিগুলো দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
Post a Comment