২ মাস ধরে নিখোঁজ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া, পরিবারের আকুতি মেয়েকে ফিরিয়ে দিন

চলতি বছরের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে নিখোঁজ হন বনগ্রাম আনন্দ কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এলমি হোসেন সামিয়া (১৩)। পরিবারের অভিযোগ, একই এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়ার পুত্র অপূর্ব (১৯) সামিয়াকে জোরপূর্বক অপহরণ করে। দীর্ঘ দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মেয়েটির কোনো সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছে সামিয়ার পরিবার।

বুধবার (১৪ মে) কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মেয়েকে ফেরত পেতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহায়তা চেয়েছেন সামিয়ার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সামিয়ার মা আরিফা আক্তার আঁখি, দাদা হযরত আলী, চাচা জসিম উদ্দিনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

সামিয়ার বাবা আবুল হোসেন বলেন, “আমার মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যেত। অভিযুক্ত অপূর্ব অনেকদিন ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে তাদের পরিবার আমাদের মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাবও দেয়, কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় মেয়েকে অপহরণের হুমকি দিতে থাকে তারা।”

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সামিয়া বাড়ির সামনে রাস্তায় বের হলে অপূর্ব ও তার সঙ্গীরা তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান আবুল হোসেন। “স্থানীয়দের নিয়ে আমরা অভিযুক্তদের বাড়িতে গেলে তারা সামিয়াকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়,” বলেন তিনি।

থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে প্রথমে মামলা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন সামিয়ার পরিবার। আদালতে দায়ের করা মামলায় অপূর্ব, তার বাবা শাহিন ও আত্মীয় পপি আক্তারকে আসামি করা হয়। পরে শাহিন ও পপি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, আদালত শাহিনকে কারাগারে পাঠান এবং পপিকে জামিনে মুক্তি দেন।

এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, “সামিয়া ও অপূর্বর মধ্যে প্রেমঘটিত বিষয় থাকতে পারে। তবে যেহেতু একটি অভিযোগ আছে, তাই তদন্ত চলছে এবং মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

অন্যদিকে সামিয়ার পরিবার বলছে, প্রেমের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এটি অপহরণ ছাড়া কিছু নয়। মেয়ের বয়স ও মানসিক অবস্থাও বিবেচনায় নেয়া জরুরি বলে জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সামিয়ার মা আরিফা আক্তার আঁখি বলেন, “দুই মাস ধরে আমার মেয়ে নিখোঁজ। আমরা রাতদিন কাঁদছি। কেউ জানে না সে কোথায় আছে। আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অভিযুক্তদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের কেউ মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রশাসনের যথাযথ তৎপরতা থাকলে এতদিনে মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্ত ও উদ্ধার অভিযান জোরদারের দাবি জানানো হয়েছে সর্বত্র।

সামিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ জানানো হয়, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমাদের মেয়েকে যদি ফেরত না পাই, তবে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচির পথে যেতে বাধ্য হব।”

এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করে নিখোঁজ সামিয়াকে উদ্ধার করতে পারে। পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা—একটি নিরীহ কিশোরী নিরাপদে ফিরে আসুক তার প্রিয় পরিবারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post