দেশে আগের মতোই চুরি-ছিনতাই চলছে, দ্রুত নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন: ভৈরবে গণ সমাবেশে ফয়জুল করীম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, দেশে আগের মতোই চুরি-ছিনতাই অব্যাহত রয়েছে এবং দেশের বাস্তব সংকট সমাধানে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় এক বিশাল গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, "বর্তমান উপদেষ্টা সরকার মাত্র ৮ মাসের মধ্যেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা এই দুর্নীতিবাজ সরকারের জন্য আন্দোলন করিনি। দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ ন্যায়ের জন্য মাঠে নেমেছে, কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়।"

তিনি দাবি করেন, "দেশে আগের মতোই চুরি, ছিনতাই, দুর্নীতি, বৈষম্য সব কিছু চলছে। জনগণের জীবনে পরিবর্তন আসেনি। অথচ এ জন্যই আমরা আন্দোলন করেছি—বৈষম্যের অবসান ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।"

ভারত নিয়ে তীব্র সমালোচনা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে চুক্তিকে 'গোলামির চুক্তি' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "১৫ বছর ভারতের সঙ্গে পরাধীনতার চুক্তি হয়েছে। ভারতের জাহাজ বিনা শুল্কে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস করত। দেশটাকে এইভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "শেখ হাসিনা বলতেন দেশে জঙ্গিবাদ বেড়ে গেছে, অথচ গত ৮ মাসে কোনো জঙ্গি ঘটনা ঘটেনি। এসব ছিল ভারতের প্রেসক্রিপশন। আসলে আমরা ভারতের পেটের মধ্যে না, ভারত আমাদের পেটের মধ্যে আছে।"

ইতিহাস জ্ঞানের অভাব ও শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা

বাংলাদেশের জনগণের ইতিহাসচেতনার অভাবের দিকে ইঙ্গিত করে মুফতি করীম বলেন, "আমরা জানি না, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ কেন হয়েছিল, ব্রিটিশদের কাছ থেকে কেন আমরা মুক্তি চেয়েছি। শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতিগত সচেতনতার অভাবই আমাদের প্রধান সমস্যা।"

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, "আমরা কি করছি, কেন করছি, কীভাবে ভোট দিচ্ছি—এই বিষয়গুলো নিয়েই মানুষ অজ্ঞ। আর এই অজ্ঞতাই শোষণের মূল হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

অন্তবর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, "এই সরকার আমেরিকার দালালি করছে। মানবিক করিডোর দেওয়ার নামে চট্টগ্রাম ও সেন্ট মার্টিনে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে, যা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।"

তিনি আরও হুঁশিয়ার করে বলেন, "আমরা দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না। জনগণ এখন জেগে উঠেছে, পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।"

সমাবেশে নেতাদের উপস্থিতি

ভৈরব উপজেলার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ মুসা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক মাওলানা আলমগীর হোসাইন তালুকদার, মাওলানা শফিকুল ইসলাম ফারুকী, মাওলানা নোমান আহমেদ এবং মুফতি মাহমুদুল কাসেমীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তারা একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ জাতীয় নির্বাচনের দাবিও তুলে ধরেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post