কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় ধনু নদীতে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে আদিবা রানী দাস নামে চার বছরের এক শিশু। শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরের পর ইটনা সদর ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামে এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত আদিবার বাবার নাম অবিকল দাস, যিনি স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন বাসিন্দা।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, দুপুরের শেষভাগে অবিকল দাস তার ছোট মেয়ে আদিবাকে নিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত ধনু নদীতে গোসল করতে যান। নদীতে কিছুক্ষণ গোসল করার পর তিনি শিশুটিকে পাড়ে রেখে একটি নৌকা নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যান। এ সময় পাড়ে একা পড়ে থাকা আদিবা অবচেতনভাবে পুনরায় নদীতে নামে। মুহূর্তেই স্রোতের টানে পড়ে শিশুটি গভীর পানিতে তলিয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যরা আদিবাকে পাড়ে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নদীর পানিতে ভেসে থাকা অবস্থায় আদিবার নিথর দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও ততক্ষণে শিশুটি প্রাণ হারায়।
ইটনা থানা পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। থানার এক কর্মকর্তা জানান, শিশুটির দুঃখজনক মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ধনু নদী বর্ষার মৌসুমে বেশ উত্তাল থাকে। নদীর পাড় এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, শিশুদের নদীর পাড়ে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যখন প্রবল স্রোত থাকে।
এদিকে, আদিবার অকাল মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গ্রামের লোকজন শোকসন্তপ্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। আদিবার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন, আর বাবা অবিকল দাস স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন।
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা নদী ও হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় নদীঘেঁষা জীবনযাত্রা এখানকার সাধারণ চিত্র। তবে নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়শই নদীতে ডুবে মৃত্যুর মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য নদীঘেঁষা এলাকাগুলোতে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনে স্থায়ী নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীর পাড়ে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
Post a Comment