পচা মাংস ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দায়ে কিশোরগঞ্জে ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমান।

কিশোরগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পচা মাংস সংরক্ষণের অপরাধে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
২৬ এপ্রিল, শনিবার দুপুরে শহরের জেলখানা মোড় এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করে কিশোরগঞ্জের খাদ্য আদালত। অভিযান পরিচালনার নেতৃত্ব দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম।

অভিযানের শুরুতে "ভাই ভাই হোটেল"-এ হানা দেয় খাদ্য আদালতের টিম। সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় হোটেলের ফ্রিজে সংরক্ষিত পচা মাংস পাওয়া যায়। একইসাথে, পুরো হোটেলের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে ভাই ভাই হোটেলের মালিক মো. আহাদ মিয়া বলেন, "আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক। কোনো তদন্ত ছাড়াই আমাদের ওপর জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আমাদের প্রতি চরম অবিচার।"

এছাড়া একই অভিযানের অংশ হিসেবে, কিশোরগঞ্জের রশিদাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত "নিউ ঢাকা ফুড প্রোডাক্টস" এবং "কিশোর ফুড প্রোডাক্টস" নামের আরও দুটি প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানো হয়।
পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানও অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ করছিল। এ কারণে নিউ ঢাকা ফুড প্রোডাক্টস এবং কিশোর ফুড প্রোডাক্টস- উভয় প্রতিষ্ঠানকেই ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, "জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যারা খাদ্য মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ও সংরক্ষিত খাবার মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পচা মাংস থেকে সংক্রমিত হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগ। এমন খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ফুড পয়জনিংয়ের মতো মারাত্মক রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

এদিকে সচেতন মহল কিশোরগঞ্জ খাদ্য আদালতের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, এ ধরনের নিয়মিত অভিযান খাদ্য উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সতর্কতা সৃষ্টি করবে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি খাবারের মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠছে। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু জরিমানা নয়, একইসাথে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো জরুরি, যাতে খাবার উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আরও যত্নবান হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত করা হতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post