কিশোরগঞ্জ শহরের ফার্মের মোড় এলাকায় মর্মান্তিক এক ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরের দিকে রাস্তার পাশে রাখা একটি মিষ্টির বাক্সের ভেতর থেকে এক নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের গাইটাল এলাকার ফার্মের মোড়ে একটি কালো কাপড়ে মোড়ানো মিষ্টির বাক্স পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। পরে কয়েকজন পথচারী সন্দেহ হলে বাক্সটি খুলে দেখতে পান, ভেতরে এক নবজাতক মৃত অবস্থায় রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।
খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, নবজাতকের শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সদ্য জন্মের পরই শিশুটিকে কোনো নির্মম ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ফেলে রেখে গেছে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, "নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। একই সঙ্গে যারা এ অমানবিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত চলছে।"
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। অনেকেই নবজাতকটির নির্মম পরিণতির জন্য সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিক মূল্যবোধের সংকটকে দায়ী করছেন।
স্থানীয় সমাজকর্মী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "একটি নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সমাজের প্রতিটি স্তরে মানবিকতার শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।"
এদিকে, কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নবজাতকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আশেপাশের এলাকায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া, এলাকাবাসীর কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওসি মামুন বলেন, "আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।"
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নবজাতকদের ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা দুঃখজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, সামাজিক কলঙ্কের ভয়, এবং সচেতনতার অভাব এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
এই মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, আমাদের সমাজে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা কতটা জরুরি। শুধু অপরাধীদের শাস্তি নয়, প্রয়োজন পুরো সমাজকে সচেতন করা এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পুলিশ আশাবাদী, তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই দোষীরা চিহ্নিত হবে এবং নবজাতকের প্রতি এই নিষ্ঠুরতার যথোপযুক্ত বিচার নিশ্চিত হবে। ঘটনাটি এখন পুরো কিশোরগঞ্জ শহরে আলোচনা ও উদ্বেগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
Post a Comment