ভৈরবে ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহারে লাভমান কৃষক

ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহারে লাভবান কৃষক
জয়নাল আাবেদীন রিটন, ভৈরব ॥
ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহারে লাভবান হওয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিযা ও সাদেকপুর ইউনিয়ন সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি বছরই বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। বাজার দর ভালো এবং কম খরচে ফলনও বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষ করছেন তাদের অনাবাদি ও পতিত জমিতে। ভুট্টা বিক্রি করে অর্থ আয়, চারা গাছের উপরি অংশগুলো গো খাদ্য শুকনো গাছ দিয়ে জ্বালানিসহ ঘরের বেড়া বা ছাউনি কাজে ব্যবহার করা যায়। কৃষকদের দাবি সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বাড়বে ভুট্টার আবাদ লাভবান হবে কৃষক। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সময় কম, অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনাবাদি জমিতেও ভুট্টার আবাদ হওয়ায় এই বছর শতাধিক হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে ভৈরবে।   

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার গজারিয়া ও সাদেক পুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরে আজ থেকে কয়েক বছর আগেও মাড়াই ঝাড়াইয়ের অসুবিধার কারণে ভুট্টা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল চাষীরা। গত কয়েক বছর ধরে সরকার কৃষিতে ভর্তুকি মূল্যে ভুট্টার মেশিন,ভুট্টার বীজ ও সার বিতরণে পালটে গেছে চিত্র। ভুট্টার জমি থেকেই বর্তমান বাজারে ১৩ -১৪ শ টাকা মণ দরে বিক্রি করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহার। ভুট্টা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন। ভুট্টা চারার গাছের (উপরি অংশ) গো-খাদ্য হিসেবে এবং শুকনো গাছগুলো জ্বালানির পাশাপাশি ঘর বাড়ির আঙ্গিনাসহ বেড়ার কাজেও ব্যবহার করা যায়। ভুট্টার নানাবিধ ব্যবহারের কারণে এই বছর শতাধিক হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, গত বছর যা ছিল মাত্র মাত্র ৫০ হেক্টর। আগামীতে এর পরিধি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা, ফলন পাওয়া যায় সর্ব নিম্ন ৪০ মণ। বর্তমান বাজার দর ১৩-১৪ শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকা। ভুট্টা চাষে বড়ো সুবিধা বর্ষা আসার অনেক আগেই ফলন উত্তোলন করা যায় বলে লোকসানের আশঙ্কা থাকে না। ধানের চেয়ে পরিশ্রম কম লাভ বেশী, তাই ভট্টার আবাদ বাড়ছে অত্র এলাকাতে। কম খরচে অধিক ফলন ও বাজার দর ভালো পাওয়ায় সামনের মৌসুমে এ অঞ্চলে ভূট্টার আবাদ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

কৃষানি খালেদা বলেন, আমি গত ৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করে আসছি। আমার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৭ হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। প্রতি মণ ভুট্টার দাম ১ হাজার টাকা দরেও হলেও বিক্রি আসে ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এতে করে আমার বড়ো একটা আয় হচ্ছে এই ভুট্টা চাষ। আমি এ টাকা দিয়ে আমার সংসারের বড়ো একটা খরচ পুষিয়ে যায়। 

মানিকদী পরিখারপাড়ের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। ভুট্টা চাষে ধানের চাইতে খরচ কম লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে ধান হয় সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ মণ। ভুট্টা হয় ৪০ থেকে ৪২ মন। ধানের দাম মনপ্রতি ৮ শ থেকে ৯শ টাকা। ভুট্টার মণ ১ হাজার টাকা। তাই এক যারা ধান চাষ করতো, তারা এখন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। 

একই এলাকার কৃষক মানিক বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫ মণ দরে ভুট্টা পাওয়া যায়। এক হাজার টাকা দরে হলেও ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। খরচ হয় মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। গত কয়েক বছর যাবৎ এ অঞ্চলের মানুষ ভুট্টা করছে। ভুট্টা চাষে ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

মানিকদী ব্লক সুপারভাইজার বায়তুল হক জানান, মানিকদী ব্লকে ভুট্টার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও ভুট্টা চাষের জন্য বীজ সার এবং ভুট্টা মাড়াইয়ের যান্ত্রিক মেশিন বিতরণ করায় ভুট্টার চাষ করে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে। ভুট্টার ফলণ ভালো হওয়ায় কৃষকদেরও আগ্রহ বেড়েছে ভুট্টা চাষে।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসার আকলিমা বেগম বলেন, ভৈরবে এ বছর প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। সেচ কম ও আগাছা কম হওয়া ভাল বাজার দরের কারণে কৃষকদের ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহী করে তুলছে। ভুট্টা উত্তোলনের পর আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সহজেই মৌচা থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারার কারণে আগামীতে এর চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে। 
 

Post a Comment

Previous Post Next Post