অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করেই রোগীর পেট সেলাই করলেন চিকিৎসক

ভৈরব প্রতিনিধি | ২০ এপ্রিল ২০২৫

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক রোগীর পেট কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করেই তা সেলাই করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রশ্ন উঠেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন মোড়ে অবস্থিত ‘মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে’। অভিযোগের শিকার রোগী শিল্পী বেগম, যিনি নরসিংদীর পটিয়া গ্রামের দারোগা বাড়ির প্রবাসী মাসুম মিয়ার স্ত্রী।

জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল বুধবার সকালে তীব্র পেটব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। আলট্রাসনোগ্রামসহ প্রাথমিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তার পেটে একটি জটিল টিউমার রয়েছে, যা দ্রুত অপারেশন না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। এরপর ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়।

তবে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, অস্ত্রোপচার শুরুর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা কোনো কারণ না দেখিয়েই অপারেশন বন্ধ করে দেন এবং রোগীর পেট সেলাই করে তাকে বেডে ফিরিয়ে নিয়ে যান। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে জানায়, দুই-এক মাস বিশ্রামের পর ঢাকায় গিয়ে বড় হাসপাতালে অপারেশন করাতে হবে।

শিল্পী বেগম বলেন, “ভয়াবহ ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অপারেশনের কথা বলা হয়। কিন্তু অপারেশন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পেট সেলাই করে বলা হয় পরে অন্য জায়গায় করতে হবে। এভাবে একজন রোগীর সঙ্গে কেমন করে এমন ব্যবহার করা যায়?”

রোগীর মেয়ে তানজিনা বলেন, “যদি অপারেশন করার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তারা শুরু করল কেন? অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে চাপ দিলে তারা ভুল স্বীকার করে লিখিত দিয়েছে।”

হাসপাতালটির মালিক ডা. একেএম জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “অস্ত্রোপচারের সময় দেখা যায় টিউমার পেটের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে, যা সরানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারত। তাই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করে পেট সেলাই করা হয়।”

তবে এই ব্যাখ্যায় রোগীর পরিবার সন্তুষ্ট নয়। তারা মনে করছেন, চিকিৎসকের এই সিদ্ধান্তে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে এবং এতে চিকিৎসা গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, “অপারেশন চলাকালে যদি গুরুতর জটিলতা দেখা দেয়, তবে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকরা কোনো গাফিলতি করেছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখতে হবে। রোগী বা তার স্বজনরা অভিযোগ করলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার ওপর আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি নিয়মিত নজরদারি না থাকায় এমন অনিয়ম ঘটছে বলেও অভিযোগ অনেকের।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রোগীর পরিবার আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post