কিশোরগঞ্জে রাষ্ট্র সংস্কার সভায় মহিলা লীগ নেত্রীর উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক,

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফাতেমা জহুরা আক্তারের উপস্থিতি ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। অন্যদিকে বরিশালে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে বিএনপির এক নেতাকে গ্রেফতার করাকে কেন্দ্র করে উঠেছে প্রশ্ন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

১৯ এপ্রিল শনিবার, কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এক সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন ফাতেমা জহুরা আক্তার। তবে সভায় দেওয়া তার বক্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি কখনও নিজেকে মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলে পরিচয় দিইনি। দলীয় কোনো সভায় যাইনি। আমাকে শুধু সম্মান জানিয়ে এ পদটি দেওয়া হয়েছিল।”

তিনি আরও জানান, তিনি এফবিসিসিআইয়ের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘ সফরে গিয়েছিলেন, যা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয়। এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে—তাহলে কীভাবে তিনি সরকারি পদাধিকার ও দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে এমন সভায় উপস্থিত হলেন?

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “ফাতেমা জহুরার দলীয় অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নই। এটি তার ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়।”

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের মিডিয়া সমন্বয়ক আবু হানিফ আরও কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “ফ্যাসিবাদের শিকার যারা, তারা যদি পরোক্ষভাবে সেই ফ্যাসিবাদকেই রক্ষা করতে চায়, তাহলে তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন সোহেল আহমেদ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মো. জহিরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক বিমল সরকার, অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন ও খাইরুল মোমেন স্বপন।

এই ঘটনার রেশ না কাটতেই বরিশালে আরও একটি বিতর্কিত ঘটনা সামনে আসে। চরকাউয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন মনিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, তিনি বিএনপির অফিস পোড়ানোর মামলার সন্দেহভাজন আসামি। তবে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে পুলিশ জানিয়েছে, “পত্রিকায় তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

মনিরের ভাই বাদল সিকদার বলেন, “আমার ভাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, জেল খেটেছে। অথচ পত্রিকার ভিত্তিতে তাকে আওয়ামী লীগ কর্মী সাজিয়ে আটক করা হয়েছে।” বিষয়টিকে ‘চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

বরিশাল সদর উপজেলার বিএনপির ও বাস্তুহারা দলের একাধিক নেতার দাবি, স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ একটি মহল পুলিশকে ব্যবহার করে মনিরকে ফাঁসিয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, “মনির হয়তো চক্রান্তের শিকার। তদন্ত শেষে যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে।”

তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, “গ্রেফতার তদন্তাধীন বিষয়। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা হবে।”

কোতয়ালী থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “পত্রিকায় দেখা গেছে মনির আওয়ামী লীগের কর্মী। আমরা সে তথ্য অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

রাজনৈতিক পরিচয় ও গ্রেফতারে প্রশ্ন

কিশোরগঞ্জ ও বরিশালের এই দুইটি ঘটনা রাজনৈতিক পরিচয়ের নির্ভরতায় দায়িত্ব ও গ্রেফতারের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একজন দলীয় নেত্রী সভায় গিয়ে নিজ পদ অস্বীকার করছেন, অন্যদিকে একজন বিরোধী দলের নেতাকে বিপরীত রাজনৈতিক পরিচয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব ঘটনা প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি করছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post