কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন ৩ জন, আহত আরও কয়েকজন

অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি; রাইয়্যান 
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় ভয়াবহ বজ্রপাতের ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অষ্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক ঘটনায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে হাওরাঞ্চলজুড়ে আকাশে কালো মেঘ জমে ছিল। প্রচণ্ড বাতাস ও বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) তার জমিতে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে, একই উপজেলার খায়েরপুর আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের খায়েরপুর গ্রামের স্বাধীন মিয়া (১৪) হাওরে মাছ ধরার সময় বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া, অষ্টগ্রামের সীমান্তবর্তী রানীগঞ্জ এলাকায় এক নারী বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তার পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও, এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন যে তিনি হাওরপাড়ের বাসিন্দা ছিলেন এবং সকালে মাঠের কাজে বের হয়েছিলেন।

এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তিনি জানান, বজ্রপাতের ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে সহায়তা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিহত পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, আজ সকাল থেকে কিশোরগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে বজ্রবৃষ্টির মাত্রা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে কৃষিকাজ ও মাছ ধরার মতো খোলা পরিবেশে কাজ করা মানুষরা ঝুঁকিতে পড়েন।

বিজ্ঞরা জানান, বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, নদী বা হাওরে অবস্থান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রঝড়ের সময় ধাতব জিনিসপত্র বা ভেজা মাটির সংস্পর্শে থাকা বিপজ্জনক হতে পারে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে কৃষকদের কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আজকের এ মর্মান্তিক ঘটনায় অষ্টগ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post