কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আফজাল হোসেন দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: রাইয়্যান 
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আফজাল হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতে তাঁকে উপস্থিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আফজাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলায় ক্ষমতার বলয় তৈরি করেছিলেন। ২০০৮ সালে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পরপর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর এমপি থাকাকালীন সময়ে নানা অভিযোগ ওঠে ঘুষ, চাঁদাবাজি, সরকারি জায়গা দখলসহ নদী ও খাল দখলের মতো অপরাধে সম্পৃক্ততার বিষয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আফজাল হোসেন এমপি থাকা অবস্থায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের সাথে বিরোধে জড়ান। তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের জমি দখল, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম এবং সরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছিল।

গত ২৩ মার্চ রাত আনুমানিক ১১টার দিকে মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেহেরপুর থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সুনির্দিষ্ট একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে, মামুন হোসেন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। আটকের পর তাঁকে মেহেরপুর থানায় নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে পূর্বে দায়েরকৃত একাধিক মামলায় আদালতের নির্দেশ রয়েছে। তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে, বিচারিক কার্যক্রম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, সাবেক এই এমপিকে গ্রেফতারের খবরে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে অনেকেই বলছেন, “বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত”, অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করছেন।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আফজাল হোসেন ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত এক নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর অধিকাংশই এখনো বিচারাধীন। আইনজীবীরা বলছেন, যথাযথ সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

সাবেক এই সংসদ সদস্যের গ্রেফতার ও আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখন স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরকার ক্লিন-আপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post