কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মোবাইল গেমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে জয় সাহা (১৯) নামের এক তরুণের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে নিজ বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জয় চলতি বছর ময়মনসিংহ নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।
জয় সাহা কটিয়াদী পৌরসভার পশ্চিমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা এবং কানু লাল সাহার ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানান, জয় দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল গেমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছিল। দিনভর ঘুমিয়ে থাকা এবং রাতভর গেম খেলার কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছিল। এ নিয়ে পরিবার থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও কোনো ফল হয়নি।
নিহতের বাবা জানান, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ছেলেকে ঘুমাতে নির্দেশ দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। সে সময় জয় ঘুমিয়ে পড়েছে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু রবিবার সকালে জয় সাহার মা ছেলের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ দেখতে পান। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
জয়ের চাচা বেনু লাল সাহা জানান, জয় দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল গেমে আসক্ত ছিল। তার বন্ধুদের যখন মাঠে খেলতে দেখা যেত, তখন জয় একাকী ঘরে বসে মোবাইলে গেম খেলত। তার ধারণা, মোবাইল গেমের অতিরিক্ত আসক্তির কারণে জয় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং হতাশার একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’’
এদিকে জয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজের মধ্যে মোবাইল গেমের প্রতি অতি আসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষাজীবন, পারিবারিক বন্ধন এবং মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল গেমের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তরুণদের মধ্যে বিষণ্ণতা, একাকীত্ব এবং আত্মহত্যাপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, সন্তানদের অনলাইন ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে এবং সময়মতো সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরামর্শের মাধ্যমে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা বিপথে না যায়।
এই ঘটনায় আবারো স্পষ্ট হলো, মোবাইল গেমের অতিরিক্ত আসক্তি তরুণদের জীবনে কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। সময় এসেছে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।
Post a Comment